h-o-r-o-p-p-a-হ-র-প্পা

| দুই-মেগাপিক্সেল | একুশে বইমেলা ২০১০ | পর্ব-০২ |

Posted on: 08/02/2010



| দুই-মেগাপিক্সেল | একুশে বইমেলা ২০১০ | পর্ব-০২ |
-রণদীপম বসু
বইমেলা মানেই হচ্ছে হরেক রকমের অগুনতি বইয়ের মেলা। তবে এটা কোন শেষ কথা নয়। আসলে নানা রঙের দর্শনার্থী মানুষেরই মেলা এটা। এবং চূড়ান্ত বিচারে লেখক-পাঠক-ক্রেতার মেলা। একজন দর্শনার্থীকে পাঠক থেকে ক্রেতার ভূমিকায় টেনে আনার কৌশলই হচ্ছে বইমেলার মূল দর্শন। আর এই দর্শনটাকে সফল করে তোলার লক্ষ্যেই যা কিছু আয়োজন। শেষ বিচারে মেলার সার্থকতাও ওখানেই। তাই একজন ব্যক্তি হিসেবে আমরা যখনই মেলায় ঢুকবো, আসলে একজন দর্শনার্থী হিসেবেই ঢুকবো। মেলার সমস্ত নান্দনিকতা সাজানো হয় একজন দর্শনার্থীকে সফলভাবে আকৃষ্ট করার  সর্বোচ্চ আগ্রহ নিয়েই। মেলার শৃঙ্খলা, প্রকাশনার স্টল সাজানো কিংবা যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা একজন দর্শনার্থীর রুচি ও সাচ্ছন্দ্যের বিষয়টাকে মাথায় রেখেই সম্পন্ন করা হয়। সার্বিক আবহের সাথে সচ্ছন্দভাবে মিশে গিয়ে একজন দর্শনার্থী যখন মেলার সাথে একাত্ম হয়ে যাবেন, তখনই তিনি দর্শনার্থী থেকে পাঠকে রূপান্তরিত হবার প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাবেন। তিনি স্টলে স্টলে ঢুঁ মেরে এটা ওটা ওল্টেপাল্টে নাড়াচাড়ার মধ্যে দিয়ে খুব অজান্তেই পাঠক হিসেবে অভিনীত হতে থাকবেন। আর চূড়ান্ত অঙ্কে এসে পাঠকরুচির সার্থক প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে একটি সফল প্রকাশনা তাঁকে একজন অনিবার্য ক্রেতা হিসেবে উপস্থাপন করবে। অর্থাৎ চূড়ান্তভাবে একজন ক্রেতার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে একটি একক চক্র পূর্ণ হবে। এরকম অজস্র চলমান চক্রের সমন্বিত বিশাল সব ঢেউয়ের ধারাবাহিক বহমানতাই এই একুশে মেলার প্রাণ।

প্রিয় পাঠক, আসুন, আমরা না হয় এই চক্রের প্রাথমিক অবস্থানে এখন একজন দর্শনার্থী হিসেবেই অভিনীত হই।

মেলার চত্বর:
যদি তুলনা টানি, তাহলে বলতেই হবে, গতবারের তুলনায় এবারের মেলাটাকে আরেকটু সুশৃঙ্খল মনে হয়েছে। অন্যবারের চেয়ে কিছুটা খোলামেলা ও গুছানো ভাব চোখ এড়ায় না।  আর এই খোলামেলা ভাবটাকে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় রূপদান করতেই বোধ হয় আয়োজক কর্তৃপক্ষ এবার মেলার একেকটা অবস্থানকে একেকজন ব্যক্তিত্বের নামে চিহ্ণিত করার সাময়িক প্রয়াস নিয়েছেন। এই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানগুলোকে আমরা একেকটি ছোট ছোট চত্বর হিসেবেও বিবেচনায় নিতে পারি।

ছবি ০১- রবীন্দ্র চত্বর:
বর্ধমান হাউসের ঐতিহ্যবাহী সাদা দালানটার দক্ষিণপাশের চত্বরটাতে যেখানে বাংলা একাডেমীর মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়ে থাকে, সেই জায়গাটাকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামেই সাময়িকভাবে চিহ্ণিত করা হয়েছে।


ছবি ০২- নজরুল চত্বর:
বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য নির্ধারিত স্থান নজরুল মঞ্চের ঠিক সামনের চত্বরটা চিহ্ণিত হয়েছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে।


ছবি ০৩- ধীরেন্দ্রনাথ চত্বর:
ভাষা আন্দোলনের উত্থাল সময়টাতে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে যিনি বাংলাকে মাতৃভাষার দাবীতে প্রথম সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন, সেই শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে নজরুল মঞ্চের পেছনের চত্বরটাকে চিহ্ণিত করা হয়েছে।


ছবি ০৪- জব্বার চত্বর:
বাংলা একাডেমী পুস্তক বিক্রয় কেন্দ্র সংলগ্ন সামনের রাস্তাটা চিহ্ণিত হয়েছে ভাষাশহীদ জব্বারের নামে।


ছবি ০৫- বরকত চত্বর:
জব্বার চত্বরের লাগোয়া দক্ষিণ পাশেই রয়েছে বরকত চত্বর।


ছবি ০৬- সালাম চত্বর:
বাংলা একাডেমীতে স্থাপিত ভাস্কর্য-স্থাপনা ‘মোদের গরব’-এর লাগোয়া উত্তর পার্শ্বস্থ অংশটা হচ্ছে সালাম চত্বর।


ছবি ০৭- রফিক চত্বর:
ভাস্কর্য-স্থাপনা ‘মোদের গরব’-এর দক্ষিণ পার্শ্বস্থ জায়গাটা হলো রফিক চত্বর।


ছবি ০৮- ড. মু: শহীদুল্লাহ চত্বর:
সালাম চত্বরের লাগোয়া উত্তর অংশটাই হলো বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র নামে।


ছবি ০৯- সাহিত্যবিশারদ চত্বর:
শহীদুল্লা চত্বরের পাশ দিয়ে একুশে ভবনের দিকে চলে যাওয়া রাস্তাটা আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদের নামে চিহ্ণিত হয়েছে।


ছবি ১০- শফিউর চত্বর:
সাহিত্যবিশারদ চত্বরের লাগোয়া উত্তরে নির্মানাধীন একুশে ভবন সংলগ্ন জায়গাটা চিহ্ণিত করা হয়েছে ভাষাশহীদ শফিউরের নামে।


ছবি ১১- সোমেন চত্বর:
বর্ধমান হাউসের পশ্চিম পার্শ্বস্থ চত্বরটাকে দেশ বিভাগকালীন দাঙ্গায় ঢাকায় মিছিলরত অবস্থায় নিহত শহীদ লেখক সোমেন চন্দের নামে চিহ্ণিত করা হয়েছে। এই চত্বরেই লিটল ম্যাগাজিন স্টলগুলোর নতুন সারিবদ্ধ অবস্থান। এবং পাশে অন্যবারের লিটলম্যাগ চত্বরটাকেই এবার লেখক কুঞ্জের জন্যে  নির্ধারণ করা হয়েছে।


ছবি ১২- বেগম রোকেয়া চত্বর:
সোমেন চত্বরের উত্তর পাশের চত্বরটাকে মহীয়সি নারী বেগম রোকেয়ার নামে চিহ্ণিত করা হয়েছে।


ছবি ১৩- সুফিয়া কামাল চত্বর:
বেগম রোকেয়া চত্বরের লাগোয়া উত্তরে নির্মানাধীন একুশে ভবনের দেয়াল সংলগ্ন অংশটাই কবি সুফিয়া কামাল চত্বর।


প্রতিটা চত্বরকে ঘিরে এবারের বইমেলার স্টলগুলোকে বিন্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে করে স্টলগুলোতে তেমন বড়সড় কোন বৈচিত্র্য না এলেও কিছুটা তো এসেছে অবশ্যই। তবে মেলার আবহে এসেছে চমৎকার এক মাত্রিক বিন্যাস। দৃষ্টিনন্দন এই শিল্প-সৌকর্য মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মনেও চমৎকার প্রভাব ফেলবে  বলেই মনে হয়।


(চলবে…)

পর্ব: [০১][*] [০৩]

[sachalayatan]

1 Response to "| দুই-মেগাপিক্সেল | একুশে বইমেলা ২০১০ | পর্ব-০২ |"

2006 এ একুশে বই মিলায় গিয়েছিলাম। তারপর থেকে দুর প্রবাসে। অনেক মিস করছি একুশে বই মেলাকে।

অনেক ভাল লাগলো বই মেলার ছবি দেখে।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

রণদীপম বসু


‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।...’
.
.
.
(C) Ranadipam Basu

Blog Stats

  • 1,234,772 hits

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 188 other subscribers
Follow h-o-r-o-p-p-a-হ-র-প্পা on WordPress.com

কৃতকর্ম

সিঁড়িঘর

দিনপঞ্জি

ফেব্রুয়ারি 2010
রবি সোম বুধ বৃহ. শু. শনি
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28  

Bangladesh Genocide

1971 Bangladesh Genocide Archive

War Crimes Strategy Forum

লাইভ ট্রাফিক

ক’জন দেখছেন ?

হরপ্পা কাউন্টার

Add to Technorati Favorites

গুগল-সূচক

Protected by Copyscape Web Plagiarism Check

Flickr Photos