h-o-r-o-p-p-a-হ-র-প্পা

Archive for অগাষ্ট 5th, 2009

kissing_on_the_sunset_by_jei_hun

বিয়ে, সংশোধনের অযোগ্য যে ভুল !
রণদীপম বসু

বিয়ে করার আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়ে হাঁদারাম আমি তখনও বুঝিনি, কী ভয়ঙ্কর অপরিণামদর্শি ভুলের ফাঁদে পা দিতে যাচ্ছি। চল্লিশ পেরিয়েও অকৃতদার পাড়াতো ভাই অরুনদা’র বিজ্ঞজনোচিত পরামর্শকে ‘দিল্লীকা লাড্ডু জো ভি নেহি খায়া, সো ভি পস্তায়া’ ভেবে নিজকে কী হতে যে কী ভেবে বসেছিলাম, তা আর নাই বললাম। দক্ষিণ পাড়ার দিগম্বর দাদু, যাকে দুই পয়সার পাত্তা দিতেও আজ পর্যন্ত কাউকে দেখি নি, আমাকে ভালোবাসেন বলেই হয়তো নির্বুদ্ধি ভেবে খুব করে বলে দিয়েছিলেন, দেখো হে, হটকারী একটা সিদ্ধান্তই যথেষ্ট, পুরুষ মানুষের সটান উল্লম্ব সিনা চোখের পলকেই ভূমির সমান্তরালে বেঁকে সোজা হওয়ার সমস্ত ক্ষমতা চিরতরে হারিয়ে ফেলে। কণ্ঠে যে বাঘের হুঙ্কার গর্জে ওঠতো, ওটা আর কখনোই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করার সীমানা ছেড়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে পারে না। অতএব এতো তড়িঘড়ি না করে বাপু মাথার বায়ু নামিয়ে ফেলো। মস্তিষ্কে বায়ু চড়ে গেলে বুদ্ধি নাকি হাঁটুতে নেমে আসে। আমার বুদ্ধিবৃত্তিও যে হঠাৎ করে হাঁটু থেকেও বিপজ্জনক নীচে নেমে গেছে, এ বিষয়ে তাঁর কোন সন্দেহ নেই। আমি আর কী বলবো ! সত্যি সত্যি আমি তখন কল্পনার চিত্রল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। যেদিকেই চাই, হতে যাওয়া তুমি আর তুমি শুধু।

তবু আমার ইতস্তত বিক্ষিপ্ত মতিগতি খুব একটা সুবিধের নয় আঁচ করেই হয়তো পক্ষকালের হাজতবাস অভিজ্ঞ আমাদের সবার মতি ভাই আমাকে সার্বক্ষণিক সাহস যুগিয়ে যেতে লাগলেন, আরে মিয়া পুরুষ হইছো আর মাইয়া মানুষের গন্ধ নিবা না এইটা কী করে হয় ! তুমি মিয়া ঐ শালাগো কারো কথাই শুইনো না। হেগোর মেরুদণ্ড আছে নাকি ! একে তো নাচনে বুড়ি, তার উপর ঢোলের বাড়ি। আমাকে আর পায় কে। কি জানি উদ্যমে ভাটা দিয়ে বসে, তাই লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে সর্বশক্তি দিয়ে তটস্ত করে তুললাম মুরুব্বিদেরকে, যারা সম্মন্ধসূত্র গড়ে দেয়ার মহান ব্রত নিয়ে চিরকালই নিজেদের বিলীন করে দিয়ে আসছেন বলে সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। অতএব যা হবার তাই হলো। কোন এক শুভলগ্ন (?) বেছে শেষ পর্যন্ত ওয়ান ওয়ে রোডে বিয়েটা করেই ফেললাম।

আহারে ! আমার মতো কেউ কি এখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছেন, দুপেয়ে একটা বীর পুরুষপুঙ্গব বিয়ে নামক সংশোধনের অযোগ্য এক বালখিল্য ঘটনার শিকার হয়ে চোক্ষের সামনে কী করে ধোপী-গাধার মতো চতুষ্পদী একটা প্রাণীতে পরিণত হয়ে যায় ! প্রবল মাধ্যাকর্ষণ উপেক্ষা করা টানটান সিনা তার কীভাবে ভারবাহী চতুষ্পদী স্বভাবে নুয়ে পড়ে ভূমির সমান্তরালে ক্রমশই নিকটবর্তী হতে হতে শেষপর্যন্ত অদ্ভুত মাটি-লগ্নতায় পেয়ে বসে তাকে ! বার্ষিকীপূর্ণ হতে না হতেই ষড়পদ ধারণ করে দর্পাহত বুকটা তার মাটি ঘষটাতে শুরু করে দেয় ! আর পরাক্রমশীলতায় যিনি যতো অহঙ্কারী ছিলেন বলে শুনা যায়, তার নাকি পদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বাড়তে বাড়তে পদহীন কেঁচোর মতোই……শেষপর্যন্ত গড়াতে গড়াতে মাটিই পরম আশ্রয় হয়ে যায় !

আহা, তবে কি জীবনটাই মাটি ! কেউ কি জানেন, গাধারাই বিয়ে করে, না কি বিয়ে করেই গাধা হতে হয় !
(০৮/০৭/২০০৮)
[sachalayatan]
[pechali]
[somewhereinblog]
[amarblog]
[sa7rong]

ট্যাগ সমুহঃ ,

”][Image: tiz_judith by Titian]গার্লফ্রেন্ড…!
রণদীপম বসু

ল্যান্ডফোনটা বেজে ওঠতেই ছিদ্দিক সাহেব ছো মেরে রিসিভারটা তুলে নিলেন। খুব মিষ্টি করে ‘হ্যা-ল্লো’ শব্দের একটা মিহি তরঙ্গ ছড়িয়ে দিলেন। কিন্তু কোথায় যেন একটা ভুল হয়ে গেলো। অবতারমার্কা হাসিমুখটা চোখ-চোয়ালসহ ক্রমেই কঠিন হয়ে ওঠতে লাগলো।

অফিসটার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটাকে অফিস বলেই মনে হয় না। প্রতিটা সহকর্মীর পারস্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার সমন্বিত প্রক্রিয়াটির সাথে একটা পারিবারিক আবহ মিশে থাকে নিবিড়ভাবে। ভাব বিনিময়ের মুক্ত পরিবেশ এতোটাই আন্তরিক, একটা পরিবারই যেন। এবং অফিসটার সবচেয়ে বড় অসুবিধাটাও হচ্ছে এটাকে অফিস বলে মনে হয় না, এটাই।

তবু ছিদ্দিক সাহেবকে আজ খুবই অসহিষ্ণু দেখালো। ‘ কী বললে ? ছেলে বৃত্তির টেস্টে টেকে নাই ! তুমি কি ঘোড়ার ঘাস কাটো নাকি ? যত্তোসব… ! ওই সব টিউশন ফি টি আমি দিতে পারবো না !’ বলেই রিসিভারটা ঠাশ করে রেখে দিলেন।

বিষয়টা পাশের ডেস্কের অরুণবাবুর চোখ এড়ালো না। হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে লাগোয়া সামনের ডেস্ক ঘেঁষে দাঁড়ালেন।
রহমান ভাই, একটা কৌতুক বলি ?
রহমান সাহেব কম্পিউটারের মনিটর থেকে চোখ ঘুরিয়ে সাগ্রহ সম্মতিতে চেয়ে রইলেন।

ভিক্ষুক: স্যার, দশটা টাকা দেন, চা খামু।
ব্যক্তি: দশ টাকা দেন মানে ! ঐ মিয়া, চা’র কাপ কতো ?
ভিক্ষুক: পাঁচ টাকা !
ব্যক্তি: তয় তুমি দশ টাকা চাইলা যে ?
ভিক্ষুক: স্যার, গার্লফ্রেন্ডরে নিয়া খামু।
ব্যক্তি: (বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে) অ্যাঁ! বলো কী ! ভিক্ষা কইরা আবার গার্লফ্রেন্ডও জুটাইয়া ফালাইছো নাকি !
ভিক্ষুক: জী না। ঐ গার্লফ্রেন্ডই তো আমারে ভিক্ষুক বানাইছে !…

হা হা হা ! শ্রোতারা মজা পেলেও ছিদ্দিক সাহেব তার কুতকুতে চোখ দুটো বড় বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ণ বানিয়ে চেয়ে রইলেন রহমান সাহেবের দিকে। রহমান সাহেব আড় চোখে খেয়াল করলেন কি না কে জানে। হাসতে হাসতে বললেন, দারুণ বানিয়েছেন তো বাবু !
আরে নাহ্ ! অরুণবাবুর উত্তর। আমি বানাইমু কী ? এই যে ডাকে এসেছে। বলেই সীলগালা ছেঁড়া খামটা দেখিয়ে দিলেন।

অতি গোপন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মধ্যবয়সী ছিদ্দিক সাহেব তার স্ফীত শরীরটাকে চেয়ারে এলিয়ে দিলেন।
(২৮/০৭/২০০৮)

(sachalayatan)

ট্যাগ সমুহঃ

lg-ke850-mobile-phone
মূর্খ…
রণদীপম বসু

কম্পিউটর মনিটরে চৌকস সচলদের কেরামতিগুলো উপভোগ করছিলাম। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে ওঠলো। সৌদি আরব থেকে কল। মোবাইলের মনিটরে ভেসে ওঠা নম্বরের শুরুতে প্লাস নয় ছয় ছয় দেখে তাই ধারণা করলাম।
স্লামালিকুম ? প্রশ্নবোধক সম্ভাষণ জানালাম।
রাকিব নি রে ? ওপাশ থেকে সরাসরি প্রশ্ল।
জ্বী না, আপনি নাম্বার ভুল করেছেন।
আমি সৌদি আরব থাইকা বলতেছি। আপনি কে ? ধমকের সুরে তার পাল্টা প্রশ্ন। যেন কোন্ ভয়াবহ অপরাধ করে ফেলেছি আমি ! সবিনয়ে বললাম, দেখুন আমি কে সেটা জরুরি নয়। আপনি কাকে খুঁজছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
এইটা কোন্ জায়গা ? আবার প্রশ্ন তার।
কিঞ্চিৎ বিরক্তই হলাম এবার। বললাম, দেখুন, ব্যক্তিগত মোবাইলের আবার কোন্ জায়গা কী ? এটা বাংলাদেশের যে কোন জায়গাই হতে পারে। আপনি যাকে চাচ্ছেন তাকে খুঁজুন।

এ মুহূর্তে হয়তো লাইনটা কেটে দেয়া উচিৎ। আমি তা করলাম না। কেননা কলটা আমি করি নি। অসৌজন্যতা দেখাই কী করে।
ওপাশ থেকে এবার নির্দেশের স্বর, আমি জানতে চাইছি এইটা কোন্ জায়গা ?
গুঁজো হয়ে বসে কম্পিউটারে ঘুরাঘুরির ঢিলেঢালা ভাবটা কেটে গেলো। টানটান হয়ে ওঠলাম। আপনি সম্ভবত ব্যক্তিসীমা লঙ্ঘন করছেন, শীতল কণ্ঠে জবাব দিলাম।
ওই মিয়া, আমি কি ডাকাইত, না ছিনতাইকারী ? এইটা কোন্ জায়গা কইলে কি আপনের মুখ খইস্যা পড়বো ? এক অর্থহীন তীব্র কটাক্ষ ঝরে পড়লো !

আমিও ততোধিক বিস্মিত ! একটা অদেখা অচেনা লোকের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়, মিনিমাম ভদ্রতাও খুইয়ে বসে আছে ! আমারও রাগ চাপা থাকলো না।
আপনি তারচে’ও গুরুতর অপরাধ করে ফেলেছেন। কারো ব্যক্তিগত অধিকারবোধকে তোয়াক্কা না করাটা ডাকাতির চে’ও বড় ডাকাতি।
ওই মিয়া, আমারে জ্ঞান দিতে আইছো ? কী করো তুমি ?
আরে বলে কী ! এ রকম পাল্টা উত্তরে একেবারে হতবাক হয়ে গেলাম ! অপমানবোধ এতোটাই তীব্র হয়ে ওঠলো যে, এখন তো আর মোবাইল বন্ধ করে দেয়া যায় না, হেস্তনেস্ত একটা করতেই হবে ! কণ্ঠে যতোটা সম্ভব দৃঢ়তা এনে কঠিন মেজাজে উত্তর করলাম, আমি কোন মূর্খ লোককে জ্ঞান দিতে যাই না কখনো।
কী কইলা ?
আমার তখন রোখ চেপে গেছে। ওপাশের বক্তব্যে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই বলে চললাম, মূর্খদের সমস্যা হচ্ছে এরা জানেই না যে এরা মূর্খ। খুব জ্ঞানীর ভাব নিয়া যেসব নির্লজ্জ মূর্খামী দেখায়, যারা তা দেখে, তারাও লজ্জায় মরে যায়। অথচ এই মূর্খরা বুঝতেই পারে না যে তার কাছা খুলে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
অই শালার পুত থামবি ? না পাছায় লাত্থি দিমু ?
ঠাশ করে কে যেনো চড় মারলো গালে আমার ! বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলাম। এমন তীব্রস্পর্শী গালির ল্ক্ষ্য ইতিপূর্বে আর কখনো হয়েছি কিনা মনে করতে পারছি না। লজ্জায় অপমানে কান দুটো ঝা ঝা করতে লাগলো। এরকম হতবুদ্ধিকর তিক্ত অভিজ্ঞতায় এক্কেবারে বাকরহিত হয়ে গেলাম। ফেলফেল করে চেয়ে রইলাম মোবাইলটার মনিটরের দিকে।

হঠাৎ বিদ্যুচ্চমক খেয়ে গেলো। আরে, তা কী করে সম্ভব ! এটা কার নম্বর !
(১১/০৯/২০০৮)

[sachalayatan]

ট্যাগ সমুহঃ ,

image
মনোবিকলন, না কি ছিটগ্রস্ততা…! (গদ্যপ্রলাপ)
রণদীপম বসু

দ্বিতীয় অংশ:
এরকম সমস্যায় একটাই উপায়। মেডিটেশন ! বিছানায় চিৎ হয়ে একনিবিষ্টে ছাদের দিকে হা করে তাকিয়ে লাশের মতো জপতে থাকলাম, আমি অমুক, বয়স এতো, সাংঘাতিক ধরনের মহাজ্ঞানী পুরুষ। স্ত্রী অমুক, কটমটিয়ে তাকানোর বাতিক থাকলেও মানুষ খারাপ না। তবে নির্বোধ রমণী। পৃথিবীর সবাই ভয়ঙ্কর ধরনের লেখক হয়ে উঠুক এটা তার ফেভারিট চাওয়া, শুধু অথর্ব স্বামীটি বাদে। একমাত্র সন্তানের নাম অমুক, বয়স এতো, নাকের দুধ না শুকালেও জলজ্যান্ত বিদ্যাসাগর, একেবারে ট্যাবলেট সংস্করণ। আর আমি ? জগতের এমন কোন বিষয় নেই যা আমার অগম্য। একেবারে নখদর্পণে। ইচ্ছে করলেই আমি যে দিকে তাকাই ভূত ভবিষ্যৎ সব বলে দিতে পারি……

মেডিটেশনে কাজ দিতে শুরু করেছে ! চোখে মুখে শীতল পরশ টের পাচ্ছি। শুধু শীতলই নয়, হিম ঠান্ডা ! আহ্, বিদ্যুৎহীন অন্ধকারেও মেডিটেশনের কী দ্রব্যগুণ ! আমার মনে পড়তে লাগলো মাসুদা ভাট্টির পোস্ট ভি এস নাইপলকে নিয়ে নোবেল বিজয়ী আত্মম্ভরী মর্ষকামী, জুলিয়ান সিদ্দিকীর তিতিক্ষা, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের ধর্ম নিয়ে কী ভয়ঙ্কর পোস্ট লালন কি জাত সংসারে, গৌতমের কনফেশন নিজেকে যাচাই করা হয় না অনেকদিন, আর অতন্দ্র প্রহরীর দুঃখ বিলাস বুড়ো হয়ে যাচ্ছি ! এখনো বাকি রয়ে গেছে ফারুক ওয়াসিফের গান ও কবিতা শোনা, ফারুক হাসানের ফের্মার শেষ উপপাদ্য মিলানো, এস এম মাহবুব মুর্শেদের পিটসবার্গের ধুসর পান্ডুলিপির খোঁজ করা, হাসান মোরশেদের অরুন্ধতী পাঠ এবং দেবোত্তম দাশের সূর্যাস্ত সহ আরো কতো কিছু ! এবং অন্ধকারে আমি সব দেখতে পাচ্ছি ! কে বলেছে অন্ধকার ! ঝলমলে আলো। কিন্তু সামনে দাঁড়ানো এ কে ? ফ্রিজিং ওয়াটার বোতল হাতে এমন দজ্জাল চেহারার রমণীকে আমি কি আগে দেখেছি কোথাও ? ওমা, অশিষ্টের মতো কথাও তো বলছে দেখি !
কী ব্যাপার ? হেমায়েতপুরের সিরিয়াল দিয়েছো কবে ? তোমার যা অবস্থা, ওখানেও রাখবে না ! এই জঞ্জাল শেষ পর্যন্ত আমার গলাতেই ঝুলবে ! অসুবিধা নাই, এর চিকিৎসাও আমার জানা আছে।
এ..এ..এ্যাঁ..!!! মেডিটেশন কি উল্টো হয়ে গেলো ? আবার করতে হবে !
ধপাশ করে চিৎ হয়ে পড়লাম !

প্রথম অংশ:
আজ সচলে লগইন করে যারা যারা পোস্ট দিয়েছেন এবং বিভিন্ন পোস্টে মন্তব্য করেছেন, প্রত্যেকে যার যার মোটমাট লেখা ও মন্তব্য সবগুলো একত্রে ধারাবাহিক সমাবেশ ঘটালে এগুলো দেখে কার কতটুকু মনোবিকলন ঘটেছে তা কি আদৌ যাচাই করা সম্ভব ? মনোসমীক্ষণবাদী দার্শনিক ফ্রয়েড থাকলে কী করতেন জানি না। এ থেকে নতুন কোন থিওরী বেরিয়ে আসতো কিনা তাও বলতে পারবো না। আর আজকে আমি কোন কারণে ছিটগ্রস্ত হয়ে ওঠেছি কিনা সেটা গবেষণার বিষয় হলেও হতে পারে। তবে সচলে ঢুকেই ভারি ভারি লেখাগুলোর দিকেই আজ মনোযোগ আকৃষ্ট হলো বেশি।

সব দিন এমনটা হয় না। কোনদিন হয়তো কোথায় কোথায় ফান থাকতে পারে ধারণা করে সেখানে ঢু মারি। আবার কোন দিন হয়তো কাব্যে পেয়ে বসে। কোন দিন মন্তব্য করার বাতিকে এমন জাপটে ধরে যে তা থেকে আর ছুটতেই পারি না। আবার এমনও দেখা গেছে সেদিন লগইন না করেই দু’তিন ঘণ্টা আয়েশ করে ঘুরাঘুরি করলাম এবং বহুৎ তৃপ্তি বোঝাই হয়ে হাঁসের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে বিছানায় উঠে গেলাম। কিন্তু আজ এমন সব আকর্ষণীয় লেখায় সচলের পাতাটা সমৃদ্ধ হয়ে ওঠলো যে খুঁজে খুঁজে সেগুলোতেই ডুব সাঁতার দিতে থাকলাম আর দমবন্ধ হবার আগে নিজেকে আবিষ্কার করলাম আমি হাঁপাচ্ছি। কারণ আমাদের সচলদের জন্য আমি সত্যিই গর্ববোধ করি এ জন্যেই যে চোখ একটা নয়। ফ্রান্সিস বেকনের সেই মৌমাছিদের মতো তাঁদের অনেকগুলো চোখ। এবং এ চোখগুলো দিয়ে তাঁরা যাই আহরণ করছেন কী চমৎকার মধু বানিয়ে এনে ছেড়ে দিচ্ছেন সচলের পাতাটাতে। এটা যেন পাতা নয়, জলজ্যান্ত মৌচাক একটা।

কিন্তু মধুর অনেক গুণাগুণের মতোই এটাও নিশ্চয় বিরাট গুণ যে, সাধ্যের বেশি গিললেই মাঘের শীতেও নাকি রাতভর ঠিকানা হয়ে ওঠে পাশের শীতল ডোবাটাই। আমার অবস্থাও কি তাই ? অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম মাত্র গুটিকয় পোস্টে ঘোরাঘুরি করেই এবং মধু একটু বেশি খেতে গিয়েই মরিমরি অবস্থা। মহামতি ফ্রয়েড থাকলে হয়তো একটা সমাধান চাওয়া যেতো। আড়চোখে ফোলা বেলুনের মতো নিজেকে বিশালভাবে দেখে মুই কি হনুরে ভাবতে ভাবতে যেভাবে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছিলাম, হঠাৎ এভাবে সর্বসমক্ষে ফুস করে চুপসে গেলাম ! মাথার ভেতর কোষগুলো তার সমস্ত সংবেদনশীলতা নিয়ে কিলবিল করতে লাগলো এবং এক সময় সচল ছেড়ে সোজা বিছানায় চিৎ হয়ে পড়ে রইলাম। কেন এমন হবে ? মাথার ধারণক্ষমতা কি ক্রমেই পড়ে আসছে ? এ ব্যাপারে মহাজ্ঞানীরা কে কী বলেছেন মনে করতে চেষ্টা করলাম। কী আশ্চর্য, মাথার ভেতরটা এক্কেবারে ফাঁকা ! এবং আরো আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম একটু আগে কোথায় কী মন্তব্য করেছি তাও ক্রমেই ঝাপসা হয়ে আসছে ! এখন উপায় ?

তৃতীয় অংশ:
প্রযোজ্য নয়।

শেষ অংশ:
ফ্রয়েড নেই তো কী হয়েছে ? আমার মেধাবী সব সচল বন্ধুরা আছে না ! নিশ্চয়ই একটা না একটা তরিকা বেরিয়ে আসবেই। এটা কি মনোবিকলন না কি ছিটগ্রস্ততা ? তবে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে শুনেছি কেসহিস্ট্রি না কি যেনো দিতে হয়। সে হিসেবে আমার আজকের কেসহিস্ট্রি অতি সরল।

গতকালকের সেই ঘটনাটায় রাতে ঘুম ভালো করে হয়েছে কি না তা ভাবার আগেই আটটায় বিছানা ছেড়ে কোনভাবে চোখমুখ গুঁজে সোজা অফিসে গিয়ে কাজকাম বাদ দিয়ে গরুখোঁজা শুরু করলাম বিডিআর এর ন্যায্যমূল্যের দুধের ইনটেক প্যাকেট কার কাছে আছে ? ক’দিন আগে বিএসটিআইর অনুমোদন সীলবিহীন ২০০৭ সালের ডালভাত কর্মসূচির জন্য বাংলাদেশ রাইফেলস এর আমদানিকৃত অতিস্বল্প মূল্যের দুধ নামের বিশেষ বস্তুটি নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে আমার ব্যক্তিগত ব্লগস্পট হরপ্পায় পোস্টের পাশাপাশি বেশ কতকগুলো পত্রিকায় প্যাকেটের দুদিকের ছবি সহ ই-মেল করি। বিশেষ কোন চ্যানেলেও দেয়া হয়। গতকাল ফিরতি মেইল এবং টেলিফোনে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ইনটেক প্যাকেট দরকার। খুঁজতে গিয়ে দেখি বাজার থেকে সব গায়েব ! এখন উপায় ? সিলেটে রিং করলাম। হতাশ। ব্রাম্মনবাড়িয়ার সাংবাদিক বন্ধুকে করলাম। তথৈবচ। গোটাদিনের শেষে বাসায় এসেই সোজা সচল। কিন্তু মাথার মধ্যে তখন চটকাচ্ছে সেই দুধ। কার কাছে যেন আছে, কিন্তু মনে করতে পারছি না। গতকাল আবার বিডিআরএর ডিজি নাকি বিরসমুখে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কোন এক চ্যানেলে, একবছর আগে এই দুধ আমদানি করা এবং এগুলো পরীক্ষিত। তাই যদি হবে, রাতারাতি সব মাল গায়েব কেন ? মাথা কি দুভাগে কাজ করে ? কোথায় একটা সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি প্যাকেট পাবো। এ যে প্রেস্টিজের ব্যাপার ! এদিকে একই সাথে সচলেও হানা দিচ্ছি। কার কার এখানে ? আগে তো বলেছিই। তবু আজকের কৃতকর্ম নীচে কপি করে দিলাম। কাজটা কি ঠিক করছি, না কি বেঠিক হয়ে যাচ্ছে তাও বুঝতে পারছি না। সাইকোলজীর ভাষায় একে কী বলে ?

আজকের কৃতকর্ম:

তিতিক্ষা-৯
লিখেছেন জুলিয়ান সিদ্দিকী [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২০০৮-০৯-২৩ ০০:০৭)
ক্যাটেগরী: উপন্যাস | সাহিত্য | তিতিক্ষা | যুবা (১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ)

| রণদীপম বসু | মঙ্গল, ২০০৮-০৯-২৩ ১৭:৩২
মাঝখানে কয়েকটা পর্ব না পড়ায় বোধ করি পেছনের সূত্র ধরতে পারি নাই। পরে একসময় পড়ে ফেলবো। তবে জুলিয়ান ভাই, যখনি পর্ব হিসেবে পোস্ট দেবেন এমন জায়গায় বিরতি টানতে হবে যেন একটা সাসপেন্স তৈরি হয়ে থাকে। যেমন এ পর্বে যদি আপনি উদ্ধৃত অংশের পরেই বিরতি দিতেন, তাহলে কেমন হতো ?
উদ্ধৃতি
তারপর বলে, ‘রবু আমার ভাই! তার লগে আমি ঘুমাইলে অসুবিধা কি?’
জয়নাব বোকার মত হেসে বলে, ‘তোমার তো অসুবিধা নাই, তয় আমার আছে!’
অবশ্য আমার ব্যক্তিগত অভিমতের সাথে একমত হতে হবে এমন কোন কথা নেই। এখানে লেখক সার্বভৌম।
চলুক।

দুঃখবিলাস : বুড়ো হয়ে যাচ্ছি!
লিখেছেন অতন্দ্র প্রহরী (তারিখ: মঙ্গল, ২০০৮-০৯-২৩ ০৯:৩৬)
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর | এরশাদাদু (৭০ বছর বা তদুর্দ্ধ)

| রণদীপম বসু | মঙ্গল, ২০০৮-০৯-২৩ ১৯:৩১
প্রথম প্রথম যখন বাসে ট্রেনে হঠাৎ করে উঠতি তরুণ ছেলেপেলেরা আঙ্কেল সম্বোধন শুরু করলো, রক্ত চড়ে যেতো মাথায়, শালারা বলে কী ! ধীরে ধীরে ব্যাপারটা থিতু হয়ে সয়ে যাবার পর চিন্তা বিস্তৃতিকে পেছনে ফেলে অজান্তেই গভীরতার দিকে যেতে থাকলাম, বুঝলাম মানুষের জীবন আসলে একটা না, অনেকগুলো। একেকটা জীবনের বয়স একেকরকম। গতিপ্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন। চিন্তা ভাবনাও।
মানুষ আসলে একই মোড়কে অনেকগুলো জীবন পেরিয়ে হেঁটে যায়। যে ভাবে, সে একটা উপলব্ধিতে হয়তো পৌঁছে। আর এ উপলব্ধিও ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন। কখনো বিষাদ, কখনো অতৃপ্তি, কখনো এতিমমনস্কতা, কখনো বা উদ্বেল হয়ে পড়া, ইত্যাদি ইত্যাদি।
যৌবন তোর টলোমলো কচুপাতার পানি
তুমুল বয়সে রুচির অহঙ্কার দিয়ে যে গানটিকে খুব অশ্লীল মনে হতো, এখন সেই গানের কথাগুলোই কী ভয়াবহরকমের সত্য হয়ে গোটা অস্তিত্বকেই কাঁপিয়ে দিতে চাচ্ছে ! সবই সময়। আহ্
টাইম, য়্যু আর এ্যান ওল্ড জীপসি ম্যান..।

ভি এস নাইপল – নোবেল বিজয়ী আত্মম্ভরী মর্ষকামী
লিখেছেন মাসুদা ভাট্টি (তারিখ: মঙ্গল, ২০০৮-০৯-২৩ ১৩:৩৪)
ক্যাটেগরী: আলোচনা | “দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ হোয়াট ইট ইজ – দ্য অথোরাইজড বায়োগ্রাফি অব ভি এস নাইপল”- | যুবা (১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ)

| রণদীপম বসু | মঙ্গল, ২০০৮-০৯-২৩ ১৯:০২
উদ্ধৃতি
স্যার ভিদিয়া প্রসাদ নাইপল, যিনি ভি এস নাইপল হিসেবেই সর্বাধিক পরিচিত,
মাসুদা আপা, ভি এস নাইপল এর পুরো নামটার ক্ষেত্রে একটু অস্পষ্টতামুক্ত হতে চাচ্ছি।
যে বইটার জন্য তাঁকে ২০০১ সালে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় বলে কথিত, ‘দ্য এনিগমা অব অ্যারাইভাল’ এর প্রমিত হোসেন কর্তৃক একই শিরোনামে বাংলা অনুবাদকৃত বই এর ভূমিকায় তাঁর পুরো নামটি দেয়া আছে বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল। আরেকটু সংক্ষেপ করলে বাংলা উচ্চারণে মনে হয় ভিদিয়া প্রসাদ না হয়ে বিদ্যা প্রসাদ-ই হবে।
যাক, আমার প্রসঙ্গ ভিন্ন।
রেজওয়ান যে মন্তব্যটি করেছেন-
উদ্ধৃতি
বিষয়টি আমাকে ভাবায় যে আমরা কেন লেখকের ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার রচনার বিচার করতে চাই। আর তার সামাজিক প্রেক্ষাপট আমাদের সমাজের মত না হতেও পারে। কাজেই আমরা কিসের সাথে কিসের তুলনা করছি সেটাও ভেবে দেখার বিষয়।

কেন লেখকের ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার রচনার বিচার করতে চাওয়া হয় সেটা নিয়ে সম্ভবত সমালোচকদের মধ্যেই দৃষ্টিভঙ্গিগত দুটো ভাগ রয়েছে। বিশ্বসাহিত্যে সৃজনশীল প্রতিটা সৃষ্টিই আসলে এক একটা মাস্টার পিস। হেমিংওয়ের ফেয়ারওয়েল টু আর্মস বা মার্কেজের হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচিউড যেমন এর আগে আরেকটা লেখা হয়নি তেমনি নাইপলের এনিগমা অব অ্যারাইভালও আরেকটা লেখা হয়নি। আমাদের মতোই রক্ত মাংসের মানুষ হয়েও এরা যে এই ইউনিক সৃষ্টিগুলো করছেন তার উৎস কার্যকারণ সম্পর্ক প্রাণী ও বস্তু বিষয়ক বা জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত বিশেষ বা তীর্যক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রচনা কেন কী করে সম্ভব হলো এইসব বিষয়ে মানুষের চিরায়ত কৌতুহল তো থাকবেই। এজন্যেই তো এতো গবেষণা এতো আলোচনা এতো কচলানি হচ্ছে এবং হতেও থাকবে এবং তা থেকে নতুন নতুন আরো কতো বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টিসচেতনতা খুলতে থাকবে। নইলে রবীন্দ্র নজরুল নিয়ে কাউকে আর থিসিস করতে হতো না, কোন পিএইচডি ধারীর দেখাও হয়তো আমরা পেতাম না বা জীবনানন্দ কি আত্মহত্যা করেছিলেন না কি দুর্ঘটনায় প্রয়াত হয়েছিলেন তা নিয়েও কোন কৌতুহল কারো থাকতো না এবং তার গদ্য বা কবিতা কীভাবে কিসের প্রভাবে এত বিষাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত তার খোঁজখবরেরও প্রয়োজন হতো না। তাহলে কোন লেখক-স্রষ্টার জীবনী রচনারও প্রয়োজন পড়তো না।
দ্বিতীয়তঃ লেখকদের সামাজিক প্রেক্ষাপটের ভিন্নতা এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ তো হতেই পারে। তবে একজন ব্যক্তিমানুষের চরিত্র যখন একজনের কলমে ফেরেস্তা হয় বা আরেকজনের কলমে শয়তানের রূপ ধরে বা আরেকজনের কলমে জন্তু চেহারা পেয়ে যায়, সবগুলোই সত্য বলেই প্রেক্ষাপটের বিশ্লেষণে আসতেই হয় আমাদেরকে।
তবে একেক সমাজের প্রেক্ষাপট একেকরকম হলেও মানুষের কিছু চিরায়ত বোধ বা উপলব্ধি সমাজনিরপেক্ষ। ভালোবাসা কষ্ট আনন্দ দুঃখ ইত্যাদি ইত্যাদির চিরায়ত বোধটাকে কিভাবে অংকিত করা হচ্ছে তাও দেখার বিষয় বৈ কি।
প্রকাশ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু মায়ের স্নেহ বা পিতার বাৎসল্য বা প্রেমাষ্পদের ভালোবাসার মৌলিক স্রোতের সাথে যদি স্রষ্টার জীবনাচারে ভিন্নতা দেখা দেয়, তাহলে এমন প্রশ্ন ওঠা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে লেখক কি আদৌ কি নিজস্ব কোন বিশ্বাস বা আদর্শ ধারণ করে তা লিখছেন, না কি মানুষ ও সমাজকে আরোপিত প্রতারণার মাধ্যমে ভণ্ডামী করছেন। যিনি এরকম ভণ্ডামীতে লিপ্ত থাকেন তাঁর সৃষ্টিকে দারুণ মেধাবী হয়তো বলা যেতে পারে, কিন্তু মহৎ বলার উপায় আছে কি ?
ধন্যবাদ মাসুদা আপা। চমৎকার একটি বিষয়ে পোস্ট দেয়ার জন্য। আর স্বনামখ্যাত দৈনিকের অশ্লীলতার দৃষ্টিভঙ্গিটা যে আসলে কী, তা এরা নিজেরাও বুঝেন বা জানেন কিনা সন্দেহ। পত্রিকায় সিনেমার রমরমা পোস্টার ছাপতে পারবে, সাণ্ডার তেলের উদ্দীপক বিজ্ঞাপন ছাপতে পারবে, সর্বরোগহরি সালসার মাধ্যমে ধাতুদৌর্বল্য দুরীকরণের মহৌষধের বিজ্ঞাপনও ছাপতে পারবে। এতে শ্লীলতার মানহানী ঘটে না। সমস্যা হয়ে যায় সাহিত্যে এসে। কী আর বলবো। আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে মাথার উপরের দিকে নিতে চাইলে কী হবে, এরা জোর করে নিজেদের মতো করে আমাদের দৃষ্টিটাকেও কোমরে নীচে রাখতে চায়, কি জানি বেয়াদপি হয়ে যায় ! রুচিবোধ যাই হোক, বেয়াদব না হলেই হলো। হা হা হা !

নিজেকে যাচাই করা হয় না অনেকদিন
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: মঙ্গল, ২০০৮-০৯-২৩ ১০:০৪)
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর | মুখোমুখি

| রণদীপম বসু | মঙ্গল, ২০০৮-০৯-২৩ ১৯:৪৭
মানুষ পৃথিবীর সবাইকে ফাঁকি দিতে পারলেও নিজেকে সে কখনোই ফাঁকি দিতে পারে না। আর যখনই এমন কোন কৃতকর্মের দায় তার বিবেকবোধের দরজায় ধাক্কা মারতে শুরু করে, তখনই সে হয়ে যায় একা। এবং নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে ভিত হয়ে ওঠে।
তালাচাবির পাসওয়ার্ডটা যারা ভুলে যায় তাদের আর ফিরে আসা হয় না কখনো। অতএব পাসওয়ার্ড যত্নে রাখুন। এখন না হোক, একসময় না একসময় অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও নিজের মুখোমুখি হতেই হবে। উপায় নেই।
আমি ঠিক জানি না, আপনি কতোটা গভীর উপলব্ধি দিয়ে এই ভয়ঙ্কর সত্যিবচনগুলো এতো চমৎকার আবৃত্তি করলেন !
শুভেচ্ছা রইলো।

লালন কি জাত সংসারে
লিখেছেন যুধিষ্ঠির [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২০০৮-০৯-২৩ ০৩:৩৯)
ক্যাটেগরী: ব্লগরব্লগর | চিন্তাভাবনা | irreligion | non-religious | ধর্ম | যুবা (১৮ বছর বা তদুর্দ্ধ)

| রণদীপম বসু | মঙ্গল, ২০০৮-০৯-২৩ ২০:৫৬
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা তুলে ধরেছেন তা নিয়ে আলোচনায় নামা মানে মস্তিষ্কের সবগুলো সচল কোষ ও ইন্দ্রিয়কে ঝালাপালা করে দেয়ার সামিল। তার চে আমি বরং আমাদের লোক-দার্শনিক বলে কথিত আরজ আলী মাতুব্বরের একটা উক্তিকে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় উদ্ধৃত করি। ঢাকা বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় আমন্ত্রিত হয়ে (যে সভাটি কোন কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি) পাঠের উদ্দেশ্যে তাঁর তৈরিকৃত বক্তৃতার এক জায়গায় তিনি বলছেন-
উদ্ধৃতি
কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে, আমি ধর্মের বিরোধিতা করছি। বস্তুত তা নয়। পশু, পাখি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি সমস্ত জীবের এমনকি জল, বায়ু, অগ্নি ইত্যাদি পদার্থেরও এক একটি ধর্ম আছে। ধর্ম একটি থাকবেই। তবে তার সঙ্গে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার থাকা আমার কাম্য নয়। মানব সমাজে ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিলো মানুষের সার্বিক কল্যাণের জন্যই। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত ধর্মগুলো মানুষের কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই করছে বেশি, অবশ্য জাগতিক ব্যাপারে। ধর্মবেত্তারা সকলেই ছিলেন মানবকল্যাণে আত্মনিবেদিত মহাপুরুষ। কিন্তু তাঁরা তাঁদের দেশ ও কালের বন্ধনমুক্ত ছিলেন না। তাঁদের প্রবর্তিত সেকালের অনেক কল্যাণকর ব্যবস্থাই একালের মানুষের অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই ধর্মীয় সমাজবিধানে ফাটল ধরেছে বহুদিন আগে থেকেই। সুদ আদান-প্রদান, খেলাধুলা, নাচ-গান, সুরা পান, ছবি আঁকা, নারী স্বাধীনতা, বিধর্মীর ভাষা শিক্ষা, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ধর্মবিরোধী কাজগুলো এখন শুধু রাষ্ট্রীয় সমর্থনপুষ্টই নয়, লাভ করেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বিশেষত গান, বাজনা, নারী, নাচ ও ছবি – এ পাঁচটির একত্র সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায় সিনেমা, রেডিও এবং টেলিভিশনে। কিন্তু সেসবের বিরুদ্ধে সনাতনপন্থীরা কখনো প্রতিবাদের ঝড় তোলেননি। অথচ প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন ফজলুর রহমান, বযলুর রহমান, আ. র. হ. এনামুল হক, আবুল ফজল প্রমুখ মনীষীগণের দু’কলম লেখায়। কতকটা আমারও।
বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের ফলে ধর্ম হোঁচট খাচ্ছে পদে পদে। কোনো ধর্মের এমন শক্তি নেই যে, আজ ডারউইনের বিবর্তনবাদ বাতিল করে দেয়, নাকচ করে মর্গানের সমাজতত্ত্ব এবং ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত করে কোপার্নিকাস-গ্যালিলিওর আকাশ তত্ত্ব, নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব এবং আইনস্টাইনের আপেকিতা তত্ত্বকে। মধ্যযুগে যুগমানবের আসনে সমাসীন ছিলেন তৎকালীন মুনি-ঋষি ও নবী-আম্বিয়ারা। তাঁরা ছিলেন গুণী, জ্ঞানী ও মহৎ চরিত্রের মানুষ, তবে ভাববাদী। তাঁদের আদেশ-উপদেশ পালন ও চরিত্র অনুকরণ করেছেন সেকালের জনগণ এবং তখন তা উচিতও ছিলো। কিন্তু সেই সব মনীষীরা এযুগের মানুষের ইহজীবনের জন্য বিশেষ কিছুই রেখে যাননি, একমাত্র পারলৌকিক সুখ-দুঃখের কল্পনা ছাড়া। এ যুগের যুগমানবের আসনে সমাসীন আছেন – কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা। এঁরা সবাই এযুগের গুণী, জ্ঞানী ও মহৎ চরিত্রের মানুষ। তবে এঁরা হচ্ছেন মুক্তমন, স্বাধীন চিন্তার অধিকারী ও বাস্তববাদী। এঁদের অবদান ছাড়া এ যুগের কোনো মানুষের ইহজীবনের এক মুহূর্তও চলে না। তাই এঁদের সম্মিলিত মতাদর্শ আমাদের মস্তকে গ্রহণ করা উচিত ভাববাদের আবর্জনার বোঝা ফেলে দিয়ে। বর্তমান যুগে বিজ্ঞানবিরোধী কোনো শিক্ষাই গ্রহণীয় নয়। এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, এঁদের সম্মিলিত মতাদর্শ কি? এক কথায় তার উত্তর হচ্ছে – মানবতা। হয়তো ঐ মানবতাই হবে আগামী দিনের মানুষের আন্তর্জাতিক ধর্ম তথা ‘মানবধর্ম’।
অতএব লালন বলে লালন কী জাত সংসারে বুঝতেই পারছেন।
ড.আহমদ শরীফের একটি কথাকে আমি দারুণভাবে ধারণ করি, যার মর্মার্থ-
মানুষ না বুঝেই জন্মসূত্রে আস্তিক। কিন্তু একজন নাস্তিক তাঁর মেধা মনন বুদ্ধি বিবেচনা ও আহরিত জ্ঞানের মাধ্যমে ধারাবাহিক অধ্যাবসায়ের মধ্য দিয়ে নাস্তিক হয়ে ওঠে। তাই একজন নাস্তিক যতটুকু মানবিক, একজন আস্তিকের কাছে তার কিছুই আশা করা যায় না। আর এজন্যই দেখা গেছে একজন নাস্তিক কখনোই সমাজের কোন অমঙ্গলের কারণ হন নি, বরং সমাজের হিত চিন্তায় নিজেকে ব্যাপৃত রাখেন। অন্যদিকে সমাজের যত অনিষ্ঠকারী ঘটনা এ যাবৎকাল ঘটেছে বা ঘটবে তার মূলে রয়েছে অবিবেচক আস্তিকরুপধারী ভণ্ডরাই।
আহমদ শরীফের কথাগুলো নিজের বয়ানে স্মৃতি থেকে বললাম। হুবহু হবে না, তবে সারমর্ম এটাই। এ নিয়ে অনেক হুলুস্থুল যুক্তি তর্ক বিতর্ক করা যেতে পারে। কিন্তু নিশ্চিৎভাবেই বিষয়টি ঠান্ডা মাথায় যুক্তির সততা দিয়ে নিজে নিজে ভাবার মতোই। নিজে নিজে বলছি এজন্যই যে, আমরা যখন বিতর্কে লিপ্ত হই তখন তাতে জেতার অনমনীয় মানসিকতা অনেকক্ষেত্রেই নিজেকে সৎ থাকতে দেয় না। নিজের সাথে তো আর প্রতারণা চলে না।
মন্তব্য লম্বা হয়ে যাচ্ছে। আর মন খুলে বলার অবকাশও কম। তবে আমি আশা করি সবাই অন্তত আমি কি হিন্দু না মুসলিম না বৌদ্ধ না খ্রিষ্ঠান না অন্যকোন ধর্মাবলম্বী তা ভুলে নিজেকে একজন যুক্তিশীল মানুষ হিসেবে যদি নিজের মুখোমুখি নিজে দাঁড়াতে পারি, তাহলে হয়তো চিন্তার অনেক জটই নিজে নিজেই খোলাশা হয়ে যেতে পারে।
তবে একটা কথা ঠিক, হ্যাভ আর হ্যাভনট-এর মাঝামাঝি কোন কিছু থাকা যেমন অসম্ভব, তেমনি যুক্তিশীলতায় মাঝামাঝি অবস্থান আসলে কোন অবস্থানই না। আত্মপ্রতারণা নয়তো ভণ্ডামী।
ধন্যবাদ সবাইকে।

এই যদি আমার আজকের কাহিনী হয়, তাহলে সচল বন্ধুদের কাছে আমার আরজি, বলেন তো ইহা কি মনোবিকলন, না কি সত্যিই ছিটগ্রস্ততা ? আমি কি আদৌ সুস্থ আছি ?

[sachalayatan]

TC1029~Mind-and-Body-Posters
ছেঁদা … (প্রাপ্তবয়স্ক কৌতুকালেখ্য)
রণদীপম বসু

[নাবালক বয়সে শুনা সাবালকী কৌতুকের তৈরি গল্পরূপ]

বিবাহের বয়স পার হইয়া যাইতেছে, কিন্তু ছেদন মিয়ার জন্য যোগ্য পাত্রীর সন্ধান পাওয়া যাইতেছে না। পরিবার পরিজন তো আছেই, পাড়া-প্রতিবেশীসহ আশে পাশের কাছে দূরের ময়-মুরব্বী পরিচিত অপরিচিত সবাইকেই প্রায় খবর দেওয়া হইয়া গেছে ছেদনের জন্য একটি রূপসী, বিদূষী, সর্বগুণে গুণান্বিতা, সকল কাজে পারদর্শি এবং যোগ্য একটি পাত্রীর সন্ধান করিয়া দিতে। কিন্তু কেহই সুবিধা করিয়া উঠিতে পারিতেছে না। কারণ, পৌরুষ যতই থাকুক, পুরুষের স্বাভাবিক দেহাবয়বের চাইতেও ছেদনের আকার অতিশয় ছোট এই সংবাদ জানিবামাত্রই পুঁচকে অসভ্য মেয়েগুলো এককথায় বাঁকিয়া বসিতে লাগিল। স্বচ্ছল পিতা-মাতার একমাত্র পুত্রসন্তান হিসাবে আল্লাহর দেয়া সহায়-সম্পদও কিছুমাত্র কম নহে। প্রাকৃতিক জ্ঞানের বহরে তাহাকে গ্রামের সকলেই তোয়াজ করিয়া চলিতে হয়। চার টাকা তিন আনা সের দরে সোয়া তিন সের দুধের পাঁচ বণ্টনে প্রত্যেকের ভাগে কত করিয়া মূল্য পরিশোধ করিতে হইবে খাতার দেড় পৃষ্ঠা ভরিয়া কী সব হিসাব নিকাশ আর আড়াই ঘণ্টা ব্যয় করিয়া পাই-পয়সা সহযোগে যে ব্যাপক ধৈর্য্য সহযোগে বলিয়া দিতে পারে, তাহাকে তোয়াজ না করিয়া উপায় আছে ! কিন্তু এইসব কারণ গৌন হইয়া সেই আকৃতিগত ছোট্ট একটা কারণই বড় হইয়া দেখা দিলো ! পড়ালেখায় তাহার আন্তরিকতায় এতটুকু ঘাটতিও কেউ কখনোই দেখে নাই। তথাপি প্রতিবারেই পরীক্ষা পূর্ণ হইবার আগেই ভাগ্যবিড়ম্বনায় অপরের দোষ ঘাড়ে লইয়া নকল করিবার দায়ে পরীক্ষার হল হইতে বহিষ্কার হইয়া গেলেও পঞ্চমবার ঠিকই মেট্রিক পরীক্ষাটি সম্পূর্ণভাবে দিতে পারিল বটে। কিন্তু পরীক্ষার খাতাকেই কেবল জ্ঞানের প্রকাশিত ক্ষেত্র হিসাবে অদূরদর্শী বিবেচনায় যাহারা অবমূল্যায়ন করিয়া অভ্যস্ত, তাহারা ছেদনের প্রতিভার সাক্ষাৎ পাইবে কী করিয়া। ফলে মেট্রিকে যে অকৃতকার্য হইবেই তাহা কি আর বলিবার বাকী থাকে ! এইসব বুঝিয়া শুনিয়া তাই বৃথা চেষ্টা আর না বাড়াইয়া ছেদন মিয়া অবশেষে প্রকৃতিকেই জ্ঞানার্জনের শ্রেষ্ঠতম উৎস হিসাবে বাছিয়া লইলো। অতএব প্রকৃতি-শিক্ষকের নিকট হইতে লব্ধ জ্ঞানের ব্যাপক চর্চার মাধ্যমে ছেদনের জ্ঞানের চতুর্মুখী সাম্রাজ্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। কিন্তু প্রকৃতি হইতে প্রত্যক্ষ বৈবাহিক জ্ঞান অর্জন এবং তৎপরবর্তী ফলাফল হাতে-নাতে পাইবার কোন উপায় ছেদনের জানা না থাকায় বাধ্য হইয়াই সে বিবাহ করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে।

চারিদিক হইতে কেবল নৈরাশ্য আর হতাশার সংবাদ পাইতে পাইতে সবাই যখন হতোদ্যম হইয়া পড়িতেছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই একটি পাত্রীর সন্ধান পাওয়া গেল। এই পাত্রীও কখন আবার বাঁকিয়া বসে, তাই কালবিলম্ব না করিয়া একপায়ে খাড়া ছেদন তাৎক্ষণিক বিবাহ করিয়া ফেলিল এবং ধুমধাম করিয়া কন্যা লইয়া গ্রামে ফিরিল। সে নিজেও হয়তো ভাবিতে পারে নাই যে এইরকম সুশ্রী স্বাভাবিক আকারের একটি পাত্রী সে অকস্মাৎ পাইয়া যাইবে। কন্যা দেখিতে গ্রামের সবাই ভাঙিয়া পড়িল। কেহই আর উপস্থিত হইতে বাকী রহিল না। বরের পাশে কন্যাকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখিয়া সবাই কন্যার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়া উঠিতে লাগিলো। কিন্তু একই সাথে সবার মুখে হঠাৎ করিয়া একটি আফসোসও ঝরিয়া পড়িল- আহা, কন্যা তো ঠিকই আছে, কিন্তু ছেদা যে ছোট !

ময়-মুরব্বী যে-ই দোয়া-আশির্বাদ করিতে আসিল, সেই আফসোসটাও ধ্বনিত হইতে থাকিল, কন্যা তো ঠিকই আছে কিন্তু ছেদা যে ছোট ! প্রথমে তাহার নাক-মুখ-চোখ লজ্জায় রক্তিম হইয়া অতঃপর ধীরে ধীরে তাহার সর্বাঙ্গ রাগে লাল হইয়া উঠিতে লাগিল। এই কোথাকার বর্বর দেশে আসিয়া পড়িয়াছে সে ! তাহাদের কাহারো জিহ্বার লাগাম তো নাই-ই, বুঝিতে পারিতেছে না স্রষ্টা ইহাদের চোখ দুইটিকে কী উপাদান দিয়া বানাইয়া পাঠাইয়াছে ! বিবাহপূর্ব জীবনে স্পষ্টভাষিণী উপাধিধারী মেয়ে হইয়া এইরকম সর্বৈব মিথ্যা অপবাদ সে সহ্য করিবে কী করিয়া ! ধৈর্য্যরে বাধ ভাঙিতে ভাঙিতে শেষ কাণায় আসিয়া ঠেকিয়াছে। ঠিক সেই মুহূর্তে গ্রামের দাদী সম্পর্কীয়া বৃদ্ধাটিও যখন তাহাকে নাড়িয়া-চাড়িয়া সামনে পিছনে ডানে বামে হইতে ভালো করিয়া যাচাই বাছাই করিয়া অবশেষে বলিয়া উঠিল- আহা, কন্যা তো সুন্দর, সবকিছুই ঠিক-ঠাক আছে, কিন্তু এই তুলনায় ছেদা তো ছোট ! কন্যা আর সহ্য করিতে পারিল না।

গ্রামবাসী যে ছেদন মিয়াকে আদর করিয়া ছেদা বলিয়া ডাকিতো, এই কথা নববধুকে না জানাইলে সে জানিবে কী করিয়া ! অতএব ছেদন মিয়ার বিবাহভাগ্য শেষপর্যন্ত পূর্বের সেই প্রাকৃতিক অবস্থাতেই রহিয়া গেল।

[sachalayatan]

800px-Sculpture_Lea_Vivot_LAC_BAC

‘ভেজালমুক্ত আত্মহত্যার অধিকার চাই’… (রম্য-রচনা)
রণদীপম বসু

(০১)
বৈকালে টাঙ্কি মারিবার নিয়মিত কর্মে বাহির হইবার পূর্বে লটকনতলায় সাঙ্গপাঙ্গ সবাই আসিয়া জমায়েত হইলেও নন্দু তখনো আসিয়া পৌঁছিল না। এই আকস্মিক বিলম্বের হেতু কী হইতে পারে তাহাও কেহ বুঝিতে পারিল না। পূর্ব ইতিহাস ঘাটিয়া দেখা হইলো, এইরূপ মহৎ কর্মে নন্দু কখনোই বিলম্ব করে নাই। তথাপি তাহার জন্য অপেক্ষা করিতে করিতে অদ্যকার টাঙ্কি মারা কর্ম-পরিকল্পনায় ব্যবহাযোগ্য কলাকৌশলে আহামরি কোন অভিনবত্ব আনা যায় কিনা এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হইয়া নন্দুর ইয়ার-দোস্তগণ এই ফাঁকে নতুন নতুন প্রকৌশলের সন্ধানে তাহাদের অস্বাভাবিক সৃজন-মেধা ব্যয় করিতে থাকিল। কখন যে সূর্য পাটে বসিতে উদ্যত হইয়াছে তাহা তাহারা টের পাইলো কি পাইলো না, কিন্তু তখনো নন্দু আসিয়া পৌঁছিলো না। নানাজনের মনে নানা প্রশ্নের উদয় হইতে লাগিল। পালে থাকিলে পালের রীতিনীতি মানিতে হইবে, ইহাই মান্যবিধান। অতএব নন্দু কেন আসিল না তাহা হইতেও বড় কথা হইলো নন্দু আসিল না। দৈনন্দিন কর্ম বকেয়া রাখিবার সরকারি রীতি তখনো তাহাদিগকে প্রভাবিত করে নাই বলিয়াই হয়তো এতৎবিষয়ের একটা হেস্তনেস্ত করিতেই হয়, এই অভিপ্রায়ে ইয়ারদোস্ত সকলে মিলিয়া নন্দুর ডেরায় গিয়া উপস্থিত হইল।

পরিবারের নাখান্দা অপদার্থ সদস্য হিসাবে নন্দুর অবস্থান কী, তাহা আর বলিবার অপেক্ষা রাখে না। বাড়ির বাহিরের দিকের লাগোয়া পরিত্যক্ত ঘরখানা যাহা কিনা যে কোনো শুভলগ্নে ভাঙিয়া পড়িবার অপেক্ষায় প্রহর গুনিতেছে, উহাতেই পরম সন্তোষে নন্দুর নিরাপদ অবস্থান কায়েম রহিয়াছে। নিরাপদ বলিতেছি এইজন্যই যে, পরিবারের অন্য সকল কিছুতেই উপভোগ ও ব্যবহার প্রত্যাশিদের মধ্যে যেরকম তীব্র প্রতিযোগিতা বর্তমান, এই ঘরখানার প্রতি উল্টো তাহাদের বৈরাগ্যের তীব্রতা প্রকাশ পাওয়ায় ঘরখানা ভাঙিয়া না পড়া পর্যন্ত নন্দুর দখলিস্বত্ব ক্ষুণ্ন হইবার কোন আশঙ্কা অদূর ভবিষ্যতেও নাই বলিলেই চলে। ওই ঘরখানার আরেকটা বিশেষত্ব রহিয়াছে। যাতায়াত সকল প্রাণীর জন্য বিনা বাধায় সমানভাবে উন্মুক্ত হইলেও কাউকে ওইখানে আসা-যাওয়া করিতে কদাচিৎ দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকে। এবং যাতায়াতকারী প্রাণীরা যে নন্দুর গুটিকয়েক ইয়ারদোস্ত ছাড়া আর কেহ নয়, এইটা বোধকরি খোলাশা করিয়া বলিবার প্রয়োজন নাই।

এই ক্ষণে নন্দু বাড়িতেও নাই। কিন্তু যেই ঘটনার জন্য এই কাহিনীর আবশ্যকীয় অবতারণা তাহা এতদধিক উল্লেখযোগ্য হইয়া উঠিল যে, ঘরখানার অভ্যন্তরস্থ বর্ণনা আর নিতান্তই অনাবশ্যক। কেননা ততক্ষণে ভাঙা তক্তপোশের উপর ছোট্ট একখণ্ড ঢেলা-ইটচাপা চিরকুটখানাই নিমেষে সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হইয়া উঠিয়াছে। ইহাতে দুইটি মাত্র বাক্যে দাগানো হস্তাক্ষর যে নন্দুরই, ইহাতে কাহারো সন্দেহ রহিল না। ‘আত্মহত্যা আমার মৌলিক অধিকার। কেবলমাত্র ইহাতেই আমি আমার পূর্ণ অধিকার খাটাইতে পারিব।’ বেশ কিছুদূর ফাঁকা রাখিয়া চিরকূটের নিচে আরেকটি ছোট্ট বাক্য শোভা পাইতেছে- ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেহ দায়ি নয়।’

চিরকুটখানা পড়িয়া সবাই হৈ হৈ করিয়া উঠিল। নন্দুর যে হঠাৎ করিয়া এমন আত্মহত্যা করিবার ইচ্ছা পুনর্বার জাগিয়া উঠিবে, ঘুণাক্ষরে কেহই তাহা বুঝিতে পারে নাই। অত্যন্ত সহজ সরল স্বভাবের নন্দুর পেটের ভিতর কোনরূপ জটিলতার লেশমাত্র নাই, এতোকাল তাহারা ইহাই জানিয়া আসিয়াছে। আর জানিবেই বা না কেন ! প্রতিবারেই আত্মহত্যা করিতে যাইবার পূর্বে সে হরিহর আত্মা ইয়ার-বন্ধুবর্গের সহিত সর্বাত্মক পরামর্শক্রমে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা ও যাচাই বাছাইপূর্বক আত্মহত্যা করিবার অধিকতর কার্যকর ও সঠিক পদ্ধতিটাকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করিয়া তবেই বাস্তবায়নে উদ্যোগী হইয়াছে। তথাপি উদ্দেশ্য সফল না হইবার পিছনে পরিকল্পনায় ত্রুটি রহিয়াছে ইহা বলা যাইবে না। ঘটনার মুহূর্তে কোথা হইতে আরেকটি অঘটন আসিয়া সবকিছু লেজেগোবরে করিয়া ফেলায় উদ্যোগগুলো বারেবারে সাফল্যের মুখ দেখা হইতে দূরে থাকিয়া গিয়াছে। তাই বলিয়া জানে-ইয়ার-দোস্তদের অবিশ্বাস করিবে !

এইতো আগেরবার নয়নার কাছে ছ্যাঁকা খাইয়া নন্দুর আত্মহত্যা করিবার অদম্য ইচ্ছাটা যখন সত্যি সত্যি চেগাইয়া উঠিল, কোথা হইতে যেনো গরু-মহিষ বাঁধিবার একখানা শক্তপোক্ত দড়ি আর একখানা মাটির কলসি সে জোগাড় করিয়া আনিল। নয়নার সহিত নন্দুর কোনো সম্পর্ক হইতে পারিত কিনা বা আদৌ কোনো সম্পর্ক হইয়াছিল কিনা কিংবা একটি সংলাপও আদান-প্রদান হইয়াছিল কিনা তাহা বিবেচ্য বিষয় নহে। নন্দুর যখন মনে হইয়াছে যে সে ছ্যাঁকা খাইয়াছে, তখন তাহাই সই। কেননা বীরভোগ্যা পৃথিবীর সমস্ত কিছুতে অধিকারযোগ্যতা থাকিবার পরেও নিজের ঘরেই যখন অধিকার খাটাইবার এতটুকু সুযোগও পাইলো না, কৈশোরোত্তীর্ণ সম্মানবোধ হয়তো তাহা মানিয়া লইতে পারে নাই। অতএব অধিকার প্রতিষ্ঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাহাকে যদি অধিকার খাটাইবার একমাত্র জায়গা হিসাবে নিজের শরীর বা প্রাণটাকেই চিহ্ণিত করিয়া দেয় তাহাতে কাহার কী বলিবার আছে ! ইতিমধ্যেই সাঁতার শিখিয়া ফেলায় কীভাবে ডুবিয়া মরিতে হয় এই প্রক্রিয়া জানা না থাকায় ইয়ার-বন্ধুদের কাছে আসিয়া পরামর্শ চাহিল। শহরে একে তো জলাধারের সমস্যা, অন্যদিকে পদ্ধতিটা অনেক আদিম এবং নির্ভরযোগ্য মনে না হওয়ায় বাতিল হইয়া গেল। বিকল্প হিসাবে ঝুলিয়া মরাটাই অধিকতর নির্ভরযোগ্য মনে হইলেও আগে গাছে চড়া না শিখিলে এই পদ্ধতিও প্রয়োগযোগ্য হইবে না বিধায় দীর্ঘপ্রক্রিয়া হিসাবে ইহাও বাতিল হইয়া গেলো। আরো দুই একটা বিকল্প নাড়াচাড়া করিয়া অবশেষে নিরাপদ প্রক্রিয়া হিসাবে ট্রেইনের তলায় পড়িয়া আত্মাহুতি দিবার পদ্ধতিটাই সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হইলো।

মরিবার ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকিবার দরুন কীভাবে কী করিতে হয় তাহা না জানিয়া একদিন সত্যি সত্যি ইস্টিশানের রেললাইনের পার্শ্বে গিয়া দাঁড়াইয়া গেলো। ইয়ার দোস্তরা ভালো করিয়া বুঝাইয়া দিলো, ট্রেইনটা যখন নিকটবর্তী হইবে তখনি ঝাঁপাইয়া লাইনের উপর পড়িয়া যাইতে হইবে। কিন্তু কোথা হইতে কীভাবে যেন খাকিপোশাকধারী বেরসিক পুলিশ আসিয়া কলার চাপিয়া ধরিয়া হিড়হিড় করিয়া টানিয়া লইয়া চলিল। ইয়ার-দোস্তরাও রেহাই পাইলো না। ইয়া বড় লোহার গরাদের ভিতরে একরাত্রি হাতিমার্কা মশার কামড় আর পুলিশি ভেটকি খাইয়া মরিবার ইচ্ছাটা সেই যে মরিয়া গেলো, পরদিন গার্জিয়ানদের বন্ড-সহির বিনিময়ে ছাড়া পাইয়া একে অন্যকে দোষারোপ করিতে করিতে বাড়ি ফিরিয়া গেল বটে। কিন্তু ইতিমধ্যে তাহারা আরো বড় হইয়া গেলো। ইহার পর বেশ কিছুদিন কাটিয়া গেল এবং ক্রমে ক্রমে মরিবার কথা ভুলিয়াও গেলো। আর এখন মন-প্রাণ ভরিয়া টাঙ্কি মারিতে হইলে যে অনিবার্যভাবেই বাঁচিয়া থাকিতে হইবে এই বোধোদয়ও তাহারা ইতিমধ্যে অর্জন করিয়া ফেলিয়াছে। কিন্তু নন্দুর এই আকস্মিক ঘটনায় তাহারা অতিশয় হকচকিত হইয়া এ ওর দিকে তাকাইতে লাগিল। হায় হায়, এখন কী হইবে ! নন্দু কোথায় যাইতে পারে ? নিশ্চয়ই সেই মাঠের দিকে গিয়াছে। অহেতুক আর বিলম্ব না করিয়া পড়িমরি সবাই উর্ধ্বশ্বাসে ছুটিল সেইদিকে।

ততক্ষণে বিকাল মজিয়া সন্ধ্যা হইয়া আসিতেছে। প্রয়োজনীয় আলোর স্বল্পতায় দূর হইতে মাঠের মধ্যিখানে ছায়ার মতো কাউকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া ইয়ার-দোস্তদের বুকে পানি আসিল। তথাপি দ্রুত নিশ্চিন্ত হইবার প্রত্যাশায় হাঁফাইতে হাঁফাইতে একযোগে সকলেই হাঁক ছাড়িল, ন…ন্দু… ! ছায়াটা নড়িয়া উঠিল, কিন্তু কোন প্রত্ত্যোত্তর আসিল না। দ্রুতবেগে কাছে আসিয়া সবাই দেখিল, নন্দু বিষণ্ন মনে বিধ্বস্ত অবস্থায় বসিয়া বসিয়া কোঁকাইতেছে। তথাপি তাহাকে জীবিত আবিষ্কার করিয়া ইয়ার-দোস্তরা যাহার পর নাই উল্লসিত হইয়া চিৎকার করিয়া উঠিল- হুড়ড়েএএএএএ…। কিন্তু নন্দুর মুখ হইতে তখন কোঁকানির সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ক্ষোভ ঝরিয়া পড়িতেছে, ভেজাল বিষ বিক্রেতা মুদি দোকানি ময়নাকে এইবার সে দেখিয়াই ছাড়িবে। কিন্তু তাহার কথার মধ্যিখানেই একজন নন্দুর গলায় আঙ্গুল ঢুকাইয়া দিলো এবং হক হক করিয়া তীব্র উদ্গারে নন্দু এক কলস পরিমাণ বমি করিয়া দিলেও বমির চেহারা দেখিবার মতো যথেষ্ট পরিমাণ দিবালোক হয়তো অবশিষ্ট ছিলো না। তথাপি শেষ পর্যন্ত নন্দু বুঝি বাঁচিয়া গিয়া তাহার আরেকটি উদ্যোগও ব্যর্থ হইয়া গেলো ! চারিদিকে ভেজালের ভীড়ে অতিষ্ঠ হইতে হইতে সবাই যখন বীতশ্রদ্ধ হইয়া উঠিয়াছে, সেই মুহূর্তে এইরকম একটি উপকারী ভেজালকে ‘চিয়ার আপ’ না জানাইলে কি হয় ! যেই ভাবা সেই কাজ। দুইজন দৌঁড়াইয়া গিয়া কোথাও হইতে বেশ কতকগুলি রসগোল্লা নিয়া আসিল। সোল্লাসে সবাই মিষ্টিগুলি খাইয়াও ফেলিল। কিন্তু বিষণ্ন অসুস্থ নন্দুর আরেকটি সাফল্য মাঠে মরিয়া যাওয়ায় অত্যন্ত আশাহত হইয়া সে ওই মিষ্টি ছুঁইয়াও দেখিল না। কিন্তু হঠাৎ করিয়া এই কী হইল ! মুহূর্তকালের মধ্যেই ইয়ার-দোস্তগণ তীব্র ভেদবমি করিতে করিতে লুটাইয়া পড়িল। এদিকে কিছু করিবার মতো সক্ষমতা তাহারও কমিয়া আসিতেছে। এবং হঠাৎ করিয়া সে সশব্দে কাঁদিয়া উঠিল।

(০২)
ক্লিনিকের ইমার্জেন্সীতে রীতিমতো ভীড় জমিয়া গেছে এবং মুহূর্তে মুহূর্তে তাহা বাড়িতেছে। এইদিকে সেইদিকে অনবরত ক্যামেরার ফ্লাশ জ্বলিয়া উঠিতেছে । কর্তব্যরত ডাক্তার সাহেব আগত সংবাদকর্মীদের কাছে ব্যাখ্যা করিতে করিতে হাঁফাইয়া উঠিতেছেন। একইসঙ্গে ভর্তি হওয়া পাঁচ-পাঁচটি তরুণ রোগীর দুঃখজনক আপডেট দিতেছেন তিনি । ভেজাল বিষের প্রয়োজনীয় বিষক্রিয়ার অভাবে বাচিঁয়া যাওয়া একমাত্র রোগীটির সঙ্গে বাকি রোগীদিগকে বাঁচানো যায় নাই ভেজাল মিষ্টিতে থাকা অনাহুত বিষক্রিয়ার কারণে। যাহার মরিয়া যাওয়ার কথা, সে মরিল না। অথচ যাহারা বাঁচিয়া থাকাকে স্বাগতম জানাইতে চাহিয়াছিল, তাহারাই কিনা মরিয়া গেলো ! জড়াইয়া গেলো ভেজাল মিষ্টির জালে !

(০৩)
সেই হইতেই আমাদের নন্দুর যখনি কোনরূপ আত্মহত্যা করিবার ইচ্ছা জাগিয়া উঠে, সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কে ভীষণ কাহিলও হইয়া পড়ে। যখনি ভাবিতে বসে, জীবনটা ভেজাল হইয়া যাওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর মধ্যেও ভেজাল ঢুকিয়া গেছে, সে আর ঠিক থাকিতে পারে না ! তথাপি নন্দু এখন আরো অনেক বড় হইয়া গেছে। এতো বড়ো সে কখনোই হইতে চাহে নাই। কিন্তু ইহা রোধ করিবার কোন উপায়ও তাহার জানা নাই। কেননা প্রয়াত বন্ধুদের প্রতি দুর্বহ কৃতজ্ঞতার অসহ্য বোঝা মাথায় নিয়া এখনো সে তাহার সেই অপূর্ণ একটি দাবিকেই ঝাণ্ডা বানাইয়া দাঁড়াইয়া থাকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, ‘ভেজালমুক্ত আত্মহত্যার অধিকার চাই। আত্মহত্যা আমার মৌলিক অধিকার।’

[sachalayatan]

ট্যাগ সমুহঃ ,


এই রিমি, দাঁড়া…!
রণদীপম বসু

ধাম করে জড়িয়ে ধরলো সে। এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই নরোম ঠোঁট দুটো সজোরে চেপে ধরলো আমার খসখসে গালে। একটা মৌ মৌ গন্ধে কয়েক মুহূর্ত কেটে গেলো। যখন বুঝতে শুরু করলাম একটি সদ্য তরুণী-দেহ তার সমগ্র সত্তা দিয়ে অক্টোপাশ-বন্ধনে আমাকে আস্টেপৃষ্ঠে পিশে ফেলতে চাইছে, কী যেন হয়ে গেলো আমার ! এই প্রথম টের পেলাম, শক্ত-সমত্থ তরুণ শরীরটাতে বুঝি মনের আড়ালে মিশে লুকিয়ে ছিলো একটা বেয়াড়া পুরুষও ! কিন্তু তার আগেই ঝট করে ছেড়ে দিয়ে দু’পা পিছিয়ে দাঁড়ালো সে, জোড়া দীঘির মতো টলটলে চোখ দুটো মেলে কীরকম চেয়ে রইলো আমার দিকে ! চিকচিক করলো কি ? আচমকা ঘুরেই দৌড়াতে লাগলো !
আরে আরে করে কী ! কেবল তো এলো ! এখনই চলে যাচ্ছে কেন ! ওর সাথে আর কি দেখা হবে আমার ! কণ্ঠ চিরে অজান্তেই বেরিয়ে এলো- এই রিমি, দাঁড়া…!
ধাবমান ডাকে কোনো সাড়াই দিলো না সে। কোমরের কাছে নেমে আসা মোটা কালো বেণীটা রিমি’র পিঠ জুড়ে লাফাচ্ছে তখন…।

গোটা গ্রামে শেষপর্যন্ত রিমি’রাই একঘর হিন্দু। বরাবরের মতো দরদী করিম চাচা বাদে আর কেউ জানে না যে আজ রাতে ওরাও এ দেশের পাট চুকিয়ে চলে যাচ্ছে। কাল বাদে পরশু অনার্স সেকেন্ড পার্ট পরীক্ষা আমার। রিমির কাছ থেকে খবরটা পেয়েই পরীক্ষা মাথায় ওঠেছে। সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেছে তখন। রিমিকে আর কখনোই দেখবো না এটা কী করে সম্ভব ! উন্মত্তের মতো চলন্ত বাসের হ্যান্ডেলে ঝুলে পড়াটাই শেষ ঝুলা হতো কিনা কে জানে, বাসের হেলপার কন্ডাক্টর ড্রাইভার এমনকি যাত্রীরাও দমে-বেদমে কত কী যে বকে গেছে। কিন্তু আমার মাথা জুড়ে একটাই ভাবনা- রিমি, তোকে কোথাও যেতে দেবো না আমি !

দীঘির পাড় ছেড়ে গাছ-গাছালি পেরিয়ে বাঁশঝাড়ের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া আকাবাঁকা রাস্তাটার সাথে রিমি’র ছুটন্ত নদীমাখা শরীরটাও হারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। সত্যি কি রিমি হারিয়ে যাবে ! ভেতরে কোথায় কী যেনো থরথর করে কেঁপে ওঠলো আমার। তা কী করে সম্ভব ! কিছুতেই তা হবার নয় ! চোখের আড়ালে যাবার আগেই ওকে ধরতে হবে। না রিমি, কোথাও যেতে দেবো না তোকে ! এক অচেনা ক্ষিপ্রতা এসে ভর করলো, তীব্র বেগে ছুটিয়ে নিলো আমাকে। ওই তো রিমি ! বাঁশঝাড়টা পেরোবার আগেই দড়াম করে কী যেনো লাগলো এসে মাথায় ! মুহূর্তেই সবকিছু অন্ধকার… … …।

…গভীর কোন নৈঃশব্দ থেকে অস্পষ্ট গুঞ্জনটা ক্রমেই জোরালো হতে হতে একটা অসহ্য হট্টগোলে পরিণত হলো। কিসের এতো হৈহুল্লোড় ? চোখ দুটো খুলেছি কিনা বুঝতে পারছি না, সবকিছু ফকফকে সাদা ! বারকয়েক পিট পিট করতেই কুয়াশার পর্দাটা ধীরে ধীরে সরে গেলো। মাথার উপর ভনভন করে ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানটাকে বড়সড় অস্পষ্ট থালার মতো লাগছে। কিন্তু কোথায় আমি ? বুঝা গেলো চিৎ হয়ে শুয়ে আছি। এদিক ওদিক তাকিয়ে হাসপাতালের কোন কেবিনের মতো মনে হলো। পর্দার ওপাশে মানুষের একটানা গুঞ্জন। কিন্তু আমি এখানে কেন ? কী হয়েছে আমার ? ওঠে বসতে গিয়েও বসতে পারলাম না। ঝনঝন ধাতব শব্দ আর শরীর জুড়ে তীব্র ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠলাম। হাত-পাগুলো শেকলবদ্ধ করা ! মানে…!!

হঠাৎ পাশে কোথাও থেকে তীব্র চিৎকারে কেঁপে ওঠলাম ! ঠা ঠা শব্দে কারো অট্টহাসিও শোনা গেলো। একটা মৌ মৌ গন্ধ নাকে এলো। হঠাৎ থরথর করে কাঁপতে লাগলো শরীর ! মনে পড়ে যাচ্ছে সব- এটা তো রিমি’র শরীরের ঘ্রাণ ! আমার রিমি কোথায় ? ওকে আমি কোথাও যেতে দেবো না !
টান পড়ে শেকলগুলো ঝনঝন করে ওঠলো আবার। স্টেথো ঝুলানো গলায় পর্দা সরিয়ে কে যেন উঁকি দিলো। চেঁচিয়ে ওঠলাম- ডাক্তার ডাক্তার…প্লীজ ! আমাকে রিমি’র কাছে যেতে দিন…প্লীজ !
’নার্স’ ! অপসৃত ডাক্তারের বদলে পর্দা সরিয়ে স্থূলদেহী অদ্ভুত-দর্শনা নার্সটি একটা সিরিঞ্জ হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকলো…।
প্লীজ সিস্টার…প্লীজ, আমাকে একটিবার রিমির কাছে যেতে দিন…ওকে আমি কোথাও যেতে দেবো না…! শেকলবদ্ধ হাতে-পায়ে শরীরটাকে সমস্ত শক্তি দিয়ে মোচড় দিলাম। কোনো লাভ হলো না। তীব্র ভূকম্পনের মতো একটা অনিঃশেষ কান্নার ঢেউ ছটফট করা বুকের খুব গভীর থেকে প্রলয়বেগে উঠে আসতে লাগলো…।
’হুঁহ্, দেশে মাইয়ার অভাব আছে ! হেই কবে মইরা ভুত হইয়া গেছে !’ গজগজ করতে করতে নার্সটি সাঁই করে সিরিঞ্জের সুঁই’টা আমার নিতম্বের পাশে ঢুকিয়ে দিলো…।
(২১/০৪/২০০৯)

[sachalayatan]
[khabor.com]

ট্যাগ সমুহঃ ,

রণদীপম বসু


‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।...’
.
.
.
(C) Ranadipam Basu

Blog Stats

  • 1,235,198 hits

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 188 other subscribers
Follow h-o-r-o-p-p-a-হ-র-প্পা on WordPress.com

কৃতকর্ম

সিঁড়িঘর

দিনপঞ্জি

অগাষ্ট 2009
রবি সোম বুধ বৃহ. শু. শনি
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

Bangladesh Genocide

1971 Bangladesh Genocide Archive

War Crimes Strategy Forum

লাইভ ট্রাফিক

ক’জন দেখছেন ?

হরপ্পা কাউন্টার

Add to Technorati Favorites

গুগল-সূচক

Protected by Copyscape Web Plagiarism Check

Flickr Photos