h-o-r-o-p-p-a-হ-র-প্পা

Archive for the ‘আহা জীবন’ Category

16042009(002)_photo_RanadipamBasu

[আহা জীবন..]..’পাগলি’
রণদীপম বসু

.

নগরীর ফুটপাথ ধরে আপনি হাঁটছেন। হঠাৎ থমকে গেলেন ! সামনেই একটা উন্মুক্ত নারী ! হয়তো উচ্ছিষ্টও। কেউ বলে পাগল, কেউ বলে বুড়ি, কেউ বা আরো কত কিছুই বলে। কিন্তু কেউ কি একবারও বলে, হোক সে মানসিক ভারসাম্যহীন, তবু গরু-ছাগল তো নয়, একটা বয়স্কা নারীই তো ! যেহেতু একজন নারী, মানুষ তো অবশ্যই। আর মানুষ যদি একমাত্র সভ্য প্রাণী হিসেবে নিজেদের নিয়ে এতোই ফুটানি করে, এটা কেমন সভ্যতা যেখানে জনাকীর্ণ রাস্তা ধরে একটা নারীকে তার শেষ অবলম্বন হারিয়ে এমন অপার নগ্নতা ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে খাবারের খুঁজে এদোকান ওদোকানে হাত পাততে পাততে অবাধ্য ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণের চেষ্টায় অনিবার্য বেরিয়ে আসতে হয় লোকালয়ে !
হয়তো এই নারীটি তার লজ্জাবোধ এখনো হারায়নি। এজন্যই পরিত্যক্ত একটা শার্টকেই গামছার মতো মুড়ে এক হাতে তার তীব্রতম লজ্জাস্থানটাকে ঢেকে রাখার দুঃসাধ্য চেষ্টাটুকু করেই যাচ্ছিল। যার লজ্জাবোধ এখনো জলাজঞ্জলি ঘটেনি, সে কি পাগল ?
না, সে পাগল নয়। পাগল আমরাই। কারণ লজ্জার একফোঁটাও আমাদের মধ্যে অবশিষ্ট নেই আর ! নইলে ঐ নারীটিকে অন্তত তার লজ্জা বিক্রি করতে এভাবে বেরিয়ে আসতে হতো না। অথচ কোন না কোন নারীকে অবলম্বন করেই আমরা বেড়ে ওঠি পরিবার নামক একটা নিজস্ব ঠিকানায়। ঐ নারী কি সত্যিই ঠিকানা হারা ???
.
[somewherein]

ট্যাগ সমুহঃ ,

26022009_Mobillife02_RanadipamBasu

[আহা জীবন..]..’প্যাডেল’
রণদীপম বসু

.
‘এই খালি… !’
সম্মতিসূচক ব্রেক কষেই রিক্সাটা দাঁড়িয়ে গেলো। ঝটপট চড়ে বসেই বললাম- একটু টেনে যান ভাই, দেরি হয়ে গেছে। মেজাজ ভীষণ খাপ্পা হয়ে আছে। নিজের উপরেই। বাঁ হাতের কব্জিতে ন’টা বেজে দশ। সেই পৌনে নয় থেকে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। তিন রাস্তার মোড়টাতে। একটার পর একটা রিক্সা আসছে যাচ্ছে। কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া, পীরের বাগ, মিরপুর-একে যাত্রীদের নিচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এতো কাছের গন্তব্য আমার, মিরপুর দুই’টাই পছন্দ হচ্ছে না তাঁদের ! কী আশ্চর্য, চালকের পছন্দেই আজকাল গন্তব্য নির্ধারণ করতে হবে নাকি !
.

.

.

.

জোরসে টেনে গেলে ন’টার অফিস পৌঁছতে এখনও ন’টা পঁচিশ বেজে যাবে। লিফট আর হেনতেন করে আরো পাঁচ মিনিট। মানে সাড়ে নয় ! খাপ্পা হবো না কেন ! গোঁড়ালি ফেটে হা হয়ে যাওয়া পা ঘষটে ঘষটে হাঁটতে থাকলেও তো এতক্ষণে নিজের ডেস্কেই থাকতাম ! ন’টাতেই নোট সহ গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটা বসের টেবিলে পেশ করার কথা। ছাগলামী করে এই পঁচিশটা মিনিট রিক্সাই খোঁজলাম। প্রতিবারই মনে হয়েছে, ওই যে পেছনে খালিটা আসছে ওটা হয়তো যাবে। শীট ! ঘাট হয়েছে ! রেগেমেগে প্রতিজ্ঞাও করে ফেলেছি প্রায়, শালার রিক্সাই চড়বো না আর ! পনের মিনিটের হাঁটা পথে আবার রিক্সা কিসের ! যাক্, এই রিক্সাটা সাথে সাথেই রাজী হয়ে গেছে।

কিন্তু এ কী ! রিক্সা তো টানছেই না ! শীর্ণদেহী চালককে তাড়া দিতে গিয়েও থেমে গেলাম। চোখ পড়লো রিক্সার প্যাডেলে। গোড়ালির একটু উপর থেকে বেঁকে যাওয়া প্রতিবন্ধী পা’টার দিকে। হাতের চেয়েও সরু হয়ে যাওয়া অক্ষম পা’টার দিকে তাকিয়ে ভেতরের ক্ষোভ উষ্মা সব গলে গেলো।

‘আপনি শুরুতেই অন্যদের মতো জিজ্ঞেস করলেন না যে, কই যাবো ?’
‘ভুল হইয়া গ্যাছে ছ্যার ! রিশকা চালাইয়া খাই, যেইহানে কন সেইহানেই তো যামু। আমাগো আবার…’
.

.

.

হাঁফাতে হাঁফাতে কথাগুলো বললো ঠিকই, বুঝলাম খুব কষ্ট হচ্ছে বেচারার। কথা আর না বাড়িয়ে দৃষ্টি নীচু করে একদৃষ্টিতে রিক্সার প্যাডেল ঘিরে পা দুটোর উঠানামা দেখতে থাকলাম। নিশ্চয়ই ঢাকায় নতুন এসেছে। গ্রাম্য সারল্যটুকু এখনো ছাড়তে পারেনি বলে হয়তো জীবিকার তাগিদে রিক্সাচালনার মতো আনফিট কাজটাই নিরূপায় বেছে নিয়েছে। সারল্যে ভরা অসহায় মুখের দিকে চেয়ে আমার নাগরিক জবানিতে তাঁকে আর প্রশ্ন করা হয়নি। জানা হয়নি তাঁর ঠিকানা-সাকিন কিংবা ফেলে আসা জীবনের অজানা গল্পগুলোর কথা। থাক্, কী দরকার ! যে গুপ্ত ট্র্যাজেডির ভার বইতে পারবো না, তাকে উন্মুক্ত করে দায়সারা কূটিলতায় নাগরিক সহানুভূতির ভণ্ডামো দেখানোর অপমানটুকু নাই বা করলাম।

প্রতিজ্ঞায় পূর্ণতা ছিলো না হয়তো। এখনো রিক্সা চেপে প্রায়ই অফিসে যেতে হয়। যথারীতি হাঁকও ছাড়ি ‘এই খালি’! তবু দৃষ্টিটা এখন আর চালকের মুখে নয়, কেন যেন ছুটে যায় ঘূর্ণমান প্যাডেলের দিকেই। যেখানে চাপলেই মন্থর জীবন ছুটতে থাকে…!

[e-book ‘protidiner golpo‘]

ট্যাগ সমুহঃ ,

15032009_photo_RanadipamBasu

[আহা জীবন..]..’আবহমান’
রণদীপম বসু

.
খোদ মহানগরীতে রাস্তার পাশে বটগাছ ! খুব একটা চোখে পড়ে না। তবু অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা এরকম একটা অল্পবয়েসী গাছের গোড়ায় মাটি ফেলে কারা যেন অতি যত্ন করে ইট সিমেন্টের একটা গোলাকার বেদী বানিয়ে রেখেছে। অতএব পাশে একটা টং-দোকান তো নিশ্চিৎ ! চা পান সিগারেট। আর হাল আমলের মোবাইল সংস্কৃতির সলতে ধরে ফেক্সিলোডের চেয়ার টেবিল পেতে বসাটাই তো স্বাভাবিক। বেশ একটা জমজমাট অবস্থা, বিশেষ করে দুপুরের দিকে। খররৌদ্রের দাবদাহে পুড়ে ঘর্মাক্ত কপালটা গলার গামছায় মুছতে মুছতে জিরিয়ে নেয়া রিক্সাচালকটির মতো গাড়িঅলা সাহেবের অপেক্ষারত ড্রাইভার কিংবা লাঞ্চবিরতির ফাঁকে দু’টান সিগারেটের ধোঁয়ায় একটু আরাম খোঁজেন চাকুরে বাবুটিও। শ্রেণীপেশার ভেদাভেদ ভুলে বহুবিচিত্র কর্মজীবী মানুষগুলোর এই দু’দণ্ড জিরিয়ে নেয়ার ফাঁকে কোত্থেকে হাজির হলো বাউলগোছের লোকটি। কাঁধে ঝোলানো দোতারাটার দিকে চেয়ে উৎসাহী কারো অনুরোধ তুঙ্গে পৌঁছতেই ব্যাস, জমে ওঠলো মেলা !
.

.

.

আবহমান বাঙালির বুকের ভেতরে পোষা চিরায়ত স্রোত মুহূর্তেই ছলকে ওঠে দোতারার টান আর বাউলের সহজিয়া সুরে। ভেঙে যায় সব বাধ। খঞ্জনি হাতে কেউ একজন দাঁড়িয়েও গেলো। বাউলের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে উদাত্ত হয়ে ওঠলো সেও। না থাক সুর, তাতে কী ! প্রাণের প্রাচুর্য তো আছে ! টং-দোকানের ফিল্টার পানির শূন্য কন্টেইনারটাই টেনে নিলো আরেকজন। শিল্পী হয়ে ওঠা শ্রমজীবী হাতের ঠুকঠাক তালে সত্যি সত্যি আসরটাই গরম হয়ে ওঠলো এবার। উৎসাহী পথচারীদের বুকেও একে একে ছড়িয়ে গেলো গ্রাম বাংলার লোকায়ত সুরের সেই চিরচেনা আহ্বান, নগরীর ইট-কাঠ-রড-সিমেন্টের তলায় চাপা পড়েও যা হারিয়ে যায় নি, হারায় না-
কই যাওরে বন্ধু তুমি আমারে ছাড়িয়া
তুমি ছাড়া জীবন যৌবন রাখি কার লাগিয়া
বন্ধু কইয়া যাও কইয়া যাওরে…।।
.
[sachalayatane-book]

ট্যাগ সমুহঃ ,

28122008

[আহা জীবন..].. ‘ডাস্টবিন
রণদীপম বসু

.

প্রতিদিনের প্রাত্যহিকতাগুলো মেনেও রোজ সকালে অফিসের পথে বেরিয়ে আরেকটা যে কাজ প্রতি কর্মদিবসেই করতে হয় আমাকে তা হচ্ছে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় এসে হাতটা উঠিয়ে অহেতুক নাকটাকে চেপে ধরে ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের স্বাভাবিকতাটুকু কিছু সময়ের জন্য রুদ্ধ করে রাখা। কেন ? কারণ রাস্তাটার প্রায় আধেক অংশ জুড়ে যে বড় ডাস্টবিনটাতে এলাকার সব বর্জ্য ও আবর্জনা এসে জমা হয়, তার তীব্র দুর্গন্ধ জায়গাটাকে সাংঘাতিক ভারী করে রাখে। তাই এ জায়গাতে এসে সব পথচারীরাই হেঁটে কিংবা রিক্সায় যেভাবেই যান না কেন, দম বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে পেরিয়ে যাবার তাড়নায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু এক দমে কখনোই পেরনো সম্ভব হয় না কারোরই।

.


তাড়া থাকলে যা হয়, সবাই একযোগে একই কাজে হামলে পড়ে মূলত স্বাভাবিক অবস্থাটাকে অস্বাভাবিক করে রীতিমতো একটা জট পাকিয়ে তুলি আমরা। ভ্রু কুঞ্চিত, নাসিকা বিকৃত এবং চোখে মুখে বিরক্তির বেসামাল ভাব ধরে আমরা যা করি তা মূলত এক ধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধে আক্রান্ত হওয়া। অর্থাৎ তখন আর সামাজিক মানুষ থাকি না আমরা। আমাদের অজান্তেই আমরা প্রচণ্ড এক আত্মকেন্দ্রিকতায় আবদ্ধ হয়ে যাই। সামাজিক প্রাণী হিসেবে আমরা কেউ কি কখনো খেয়াল করেছি যে ওইটুকু দূরত্বের মধ্যে আমাদের কারো মুখে কোন হাসি থাকে না ? কার আগে কে জায়গাটা পেরিয়ে যেতে পারি সেই এককেন্দ্রিক বোধে আমরা একেকটা স্বার্থপর প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়ে যাই। সেই কয়েক মুহূর্তের জন্য বন্ধুতা, ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক রুচি প্রকাশ কিংবা পরহিতব্রতীতার মতো ইতিবাচক অন্য গুণগুলো (আদৌ যদি তা আমাদের মধ্যে থেকে থাকে বা আরোপিত হয়) দূরে দাঁড়িয়ে হয়তো আমাদেরকে ব্যঙ্গ করতে থাকে। অভ্যস্ত স্বাভাবিকতার বাইরে এই যে মুহূর্তের জন্য আমাদের ভিন্ন প্রেক্ষাপট ফুটে ওঠতে থাকে, এটাই কি আমাদের প্রকৃত চেহারা !

.

নইলে পেটের দায়ে কর্তব্যরত পরিচ্ছন্নকর্মী নামের যে লোকগুলো এই তীব্র দুর্গন্ধময় অস্বস্তিকর আবহের মধ্যে কোদাল বা বেলচা দিয়ে নির্বিকারভাবে ময়লা আবর্জনাগুলোকে জড়ো করে বিরাট ভ্রাম্যমান ডাস্টবিনটার মধ্যে পুরতে থাকে, তাদের প্রতিই কি আমরা আমাদের বিরক্তিটা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করি না ? আমরা হয়তো তা করতেই পারি। কেননা এমন ভদ্রজনোচিত বিরক্তি প্রকাশের অধিকার যে আমাদের ভদ্রলোকদেরই আয়ত্তে ! কিন্তু ক’জনে আমরা এটা ভাবি যে, পেটের দায়ে আরো কতো কাজই তো মানুষ করে। এই ঘৃণ্য কাজটা ছাড়া এরা কি অন্য কোন কাজ বেছে নিতে পারলো না ? আমরা যারা এরকম ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি তাঁরা হয়তো এটা কখনো ভাবি না যে, যদি এরকম সময় কখনো এসেই পড়ে যখন এই পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এ কাজটাকে সত্যি সত্যি ঘৃণ্য ভেবে একযোগে কর্মবিরতি দিয়ে অন্য কাজে পেটের দায় মেটাতে উদ্যোগী হয়ে ওঠে, ফিটফাট ভদ্রলোক আমাদের কী গতি হবে তখন ?
(১৮-০৩-২০০৯)

[somewherein]

ট্যাগ সমুহঃ ,

রণদীপম বসু


‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। তা প্রকাশ করতে যদি লজ্জাবোধ হয়, তবে সে ধরনের চিন্তা না করাই বোধ হয় ভাল।...’
.
.
.
(C) Ranadipam Basu

Blog Stats

  • 1,233,519 hits

Enter your email address to subscribe to this blog and receive notifications of new posts by email.

Join 189 other subscribers
Follow h-o-r-o-p-p-a-হ-র-প্পা on WordPress.com

কৃতকর্ম

সিঁড়িঘর

দিনপঞ্জি

মে 2024
রবি সোম বুধ বৃহ. শু. শনি
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

Bangladesh Genocide

1971 Bangladesh Genocide Archive

War Crimes Strategy Forum

লাইভ ট্রাফিক

ক’জন দেখছেন ?

হরপ্পা কাউন্টার

Add to Technorati Favorites

গুগল-সূচক

Protected by Copyscape Web Plagiarism Check

Flickr Photos