Posts Tagged ‘জীব’
|বেদান্তদর্শন-অদ্বৈতবেদান্ত-০৬ : অদ্বৈতমতে জীব বা আত্মা|
রণদীপম বসু
…
২.৪ : অদ্বৈতমতে জীব
শঙ্করাচার্য বর্ণিত অদ্বৈতবেদান্তের মূল সূত্রেই জীব সম্পর্কেও বলা আছে- ‘ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ’ অর্থাৎ, ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং জীব ও ব্রহ্ম অভিন্ন। তার মানে, শঙ্করের তৃতীয় বাণীটি হলো- ‘জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ’ অর্থাৎ, জীব এবং ব্রহ্ম এক ও অভিন্ন তথা জীব ব্রহ্মস্বরূপ।
এখন প্রশ্ন হলো, অদ্বৈত মতানুসারে সচ্চিদানন্দময় ব্রহ্ম সত্যস্বরূপ, জ্ঞানস্বরূপ এবং অনন্ত সত্তাবিশিষ্ট। কিন্তু জীব তো সত্যস্বরূপ নয়, জ্ঞানস্বরূপ নয় এবং অনন্ত সত্তাবিশিষ্ট নয়। তাহলে জীব ও ব্রহ্মকে কিভাবে এক ও অভিন্ন বলা যাবে ?
উত্তরে বলা হয়, জীবেরও ব্রহ্মের মতোই সচ্চিদানন্দস্বরূপ হওয়া উচিত। অর্থাৎ আগুন এবং আগুনের একটা ফুলকি যে অর্থে এক, জীব ও ব্রহ্ম সেই অর্থেই অভিন্ন। কিন্তু জীবের ব্রহ্মস্বরূপতা আমাদের উপলব্ধি হয় না। কারণ দেহ, মন, ইন্দ্রিয়, বুদ্ধি এবং বিষয়-বাসনার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ফলে জীবের জ্ঞান, ঐশ্বর্য ইত্যাদি তিরোহিত হয়। সংসারদশায় অবিদ্যা জীবের ব্রহ্ম-স্বভাবকে আবৃত করে রাখে। এই অবিদ্যা মলিনসত্ত্বপ্রধান-ব্যষ্টি-অবিদ্যা। এর ফলে জীব নিজেকে জ্ঞাতা, কর্তা ও ভোক্তা বলে মনে করে।
জীবের সংসারদশা :
ব্যবহারিক স্তরে ‘আমি’কে আমরা প্রত্যেকেই জানি। এই ‘আমি’ই হলো আমাদের জ্ঞান অনুভূতি ইচ্ছা ইত্যাদির অধিষ্ঠান ও কর্তা। ‘আমি জানি’, ‘আমি অনুভব করি’, ‘আমি ইচ্ছা করি’- এইসব বাক্যগুলির মধ্য দিয়ে সেই ব্যবহারিক আত্মা বা জীবের অস্তিত্ব বা বোধ প্রকাশিত হয়। আমার জ্ঞান, অনুভূতি ও ইচ্ছার কর্তা হলো আমি বা অহং। সুতরাং, এখানে জীব কর্তা এবং ভোক্তা। কিন্তু ব্রহ্ম কর্তা নয়, এবং জ্ঞানের বিষয়ও নয়। জানা, অনুভব করা এবং ইচ্ছা করা- এগুলি সবই চৈতন্যের ক্রিয়া।
কিন্তু এই চৈতন্য শুদ্ধ চৈতন্য নয়। এগুলি মায়া বা অবিদ্যার দ্বারা পরিচ্ছিন্ন বা সীমিত চৈতন্যের ক্রিয়া। শুদ্ধ-চৈতন্য থেকে ভিন্ন জীবাত্মাকে তাই সাক্ষী-চৈতন্য বলে। জ্ঞান, অনুভূতি ও ইচ্ছায় দ্বৈতভাব থাকে। যেমন- জ্ঞাতা ও বিষয়ের সম্পর্ক, অনুভব ও তার বিষয়ের সম্পর্ক, ইচ্ছা ও ইচ্ছার বিষয়ের সম্পর্ক। ব্রহ্ম কিন্তু অদ্বয় ও সকল প্রকার ভেদশূন্য। অপরপক্ষে কিছু জানতে গেলে, অনুভব করতে গেলে এবং কিছু ইচ্ছা হলে বিষয়ী ও বিষয়ের মধ্যে ভেদ অবশ্যম্ভাবী। তাই আমাদের অহং বা আমি-টি ব্রহ্ম নয়। অহং হলো অবিদ্যার দ্বারা সীমিত ব্রহ্ম বা জীব।
এ প্রেক্ষিতে শারীরকমীমাংসা ভাষ্যে শঙ্করাচার্য বলেন- Read the rest of this entry »
|বেদান্তদর্শন-অদ্বৈতবেদান্ত-০৪ : অদ্বৈতমতে জগৎ|
রণদীপম বসু
…
২.২ : অদ্বৈতমতে জগৎ
বেদান্তদর্শনের সূত্রগ্রন্থ ব্রহ্মসূত্র বা শারীরকসূত্রের দ্বিতীয় সূত্রটি হলো-
‘জন্মাদ্যস্য যতঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-১/১/২)
ভাবার্থ : জগতের সৃষ্টি-স্থিতি-লয় যা থেকে হয় (তাহাই ব্রহ্ম)।
এই সূত্রটির ভাষ্য রচনা করতে গিয়ে অদ্বৈতবেদান্তের প্রধান প্রবর্তক শঙ্করাচার্য বলেন- Read the rest of this entry »
| বেদান্তদর্শন-অদ্বৈতবেদান্ত-০২ : শঙ্করের অদ্বৈতবাদ |
রণদীপম বসু
…
২.০ : শঙ্করের অদ্বৈতবাদ
বিশুদ্ধ অদ্বৈতবাদের প্রধান প্রবক্তা হলেন শঙ্করাচার্য। অদ্বৈতবাদের মূল বক্তব্য প্রকাশ করতে গিয়ে শঙ্করাচার্য বলেছেন-
‘শ্লোকার্ধেন প্রবক্ষ্যামি যদুক্তং গ্রন্থকোটিভিঃ
ব্রহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ’।।
অর্থাৎ : কোটি কোটি গ্রন্থ যে সত্য প্রতিপাদন করতে ব্যস্ত, আচার্য তা শ্লোকার্ধেই ব্যক্ত করেছেন। এই মূল সত্য হলো : ‘ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা এবং জীব ও ব্রহ্ম অভিন্ন’।
বস্তুত ব্রহ্ম, জগৎ ও জীবের স্বরূপ ব্যাখ্যাই সমগ্র বেদান্ত দর্শনের প্রতিপাদ্য বিষয়। অদ্বৈতবাদে জগৎ ও জীবকে ব্রহ্মে লীন করে একমাত্র ব্রহ্মকেই সত্য বলে স্বীকার করা হয়েছে। ব্রহ্মই জগতের নিমিত্ত ও উপাদান কারণ। জগৎপ্রপঞ্চ স্ব স্ব কারণে লীন হয়ে ব্রহ্মমাত্রে অবশিষ্ট থাকে। যেহেতু এই মতে ব্রহ্ম একমাত্র সত্য, সেহেতু জগৎ মিথ্যা। ব্রহ্ম হলেন চৈতন্যস্বরূপ। জগতে আমরা সবাই চেতন জীব। তাহলে চেতন জীবের সাথে ব্রহ্মের সম্বন্ধ কী ? উত্তরে বলা হয়েছে যে জীব ও ব্রহ্ম অভিন্ন। জীবও মায়ামুক্ত হলে নিজেকে ব্রহ্ম বলেই জানে। সুতরাং ব্রহ্মই প্রকতপক্ষে সৎ। সংক্ষেপে এই হলো অদ্বৈততত্ত্ব।
আচার্য শঙ্কর উপনিষদীয় নিষ্প্রপঞ্চ ব্রহ্মতত্ত্বের অন্যতম প্রধান সমর্থক। তাঁর মতে ব্রহ্ম নির্গুণ, নির্বিকার, নিরাকার, এক এবং অদ্বিতীয়। সাধারণত লক্ষণ এবং প্রমাণের দ্বারা বিষয় সিদ্ধ হয়। তাহলে ব্রহ্মের লক্ষণ বা প্রমাণ কী ? নির্গুণ ব্রহ্মের সদর্থক লক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। বস্তুর অসাধারণ ধর্মের দ্বারা লক্ষণ নির্দেশ করা হয়। ব্রহ্ম নির্ধর্মিক হওয়ায় তাঁর লক্ষণ সম্ভব নয়। এ কারণে অদ্বৈতপন্থীরা এক বিশেষ যুক্তিপ্রণালীর সাহায্যে ব্রহ্মোপদেশ দিয়ে থাকেন। এই বিশেষ যুক্তিপ্রণালী ‘অধ্যারোপ-অপবাদ’ নামে পরিচিত।
অধ্যারোপ = অধি + আরোপ। অর্থাৎ ভ্রমের আরোপকে বলা হয় অধ্যারোপ। যথার্থ বস্তুতেই ভ্রমের আরোপ হয়। কিন্তু যথার্থ বস্তুতে কি যথার্থ বস্তুর আরোপ সম্ভব ? এ বিষয়ে শাঙ্করভাষ্যে বলা হয়েছে- Read the rest of this entry »
| বেদান্তদর্শন-অদ্বৈতবেদান্ত-০১ : ভূমিকা- গৌড়পাদ ও শঙ্করাচার্য |
রণদীপম বসু
…
১.০ : ভূমিকা
অদ্বৈতবাদকে উপনিষদীয় চিন্তাধারার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি বলে মনে করা হয়। যদিও এই মতবাদের সূত্রপাত শঙ্করাচার্যের (৭৮৮-৮২০ খ্রিস্টাব্দ) আবির্ভাবের পূর্বকালেই ঘটেছিলো, তবুও এই মতবাদ শঙ্করাচার্যের নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে আছে। শঙ্করাচার্যের গুরু ছিলেন আচার্য গোবিন্দ। গোবিন্দের গুরু গৌড়পাদ। গৌড়পাদই প্রথম উপনিষদ, ব্রহ্মসূত্র ও গীতার প্রতিপাদ্য বিষয়কে অবলম্বন করে একটি যুক্তিসঙ্গত অদ্বৈত মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর বিখ্যাত গৌড়পাদকারিকা রচনা করেন, যা অদ্বৈতকারিকা বা মাণ্ডুক্যকারিকা নামে প্রসিদ্ধ। শঙ্করাচার্য বারবার গৌড়পাদ ও তাঁর কারিকার কাছে ঋণ স্বীকার করেছেন। তাই আচার্য গোবিন্দ শঙ্করাচার্যের দীক্ষাগুরু হলেও শিক্ষাগুরু ছিলেন গৌড়পাদই।
তবে শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতবাদ কেবলমাত্র তাঁর পূর্বসূরীর পুনরাবৃত্তি ছিলো না মোটেও। অসাধারণ প্রতিভাবান তিনি বেদ, উপনিষদ্, ব্রহ্মসূত্র, গীতা ও গৌড়পাদকারিকাকে ভিত্তি করে এক অনবদ্য, সুসংহত ও যুক্তিপ্রয়াসের মাধ্যমে অদ্বৈত দর্শন প্রতিষ্ঠা করেন। এই দর্শনই তাঁর অসামান্য মৌলিক দার্শনিক প্রতিভা ও অধ্যাত্মবোধের প্রতিফলন। আচার্য শঙ্কর অদ্বৈতবাদ তথা সমগ্র বেদান্ত দর্শনকে এমন এক যুক্তিভিত্তিক ও মর্যাদাপূর্ণ ভাববাদীয় স্তরে উন্নীত করেছেন যে, বেদান্তের আলোচনা বলতে প্রথমেই তাঁর মতবাদের আলোচনাই মনে পড়ে। তবে অদ্বৈতবাদের ধারণা যেহেতু শঙ্করপূর্বকালের, তাই শঙ্করের দর্শনের উৎস অনুসন্ধানের জন্য তাঁর পূর্বসূরী গৌড়পাদ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখা আবশ্যক মনে হয়।
১.১ : গৌড়পাদ (৫০০খ্রিঃ)
খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীকে গৌড়পাদের সময়কাল বলে ধারণা করা হয়, এবং তিনি ছিলেন নর্মদাতীরস্থ স্থানের অধিবাসী। নর্মদা নদী ভারতের মধ্যপ্রদেশ, মালব ও গুজরাট পর্যন্ত বহমান হলেও ঠিক কোন জায়গায় গৌড়পাদের নিবাস ছিলো তা নিশ্চিত করা যায়নি।
গৌড়পাদ মাণ্ডুক্য উপনিষদকে ভিত্তি করে বিখ্যাত আগমশাস্ত্র বা মান্ডুক্যকারিকা রচনা করেন। ঈশ্বরকৃষ্ণের সাংখ্যকারিকার ওপরেও গৌড়পাদের একটি ক্ষুদ্র টীকা আছে বলে জানা যায়। তবে তাঁর মহান কৃতি হলো আগমশাস্ত্র বা মাণ্ডুক্য-কারিকা। মাণ্ডুক্য-কারিকার চারটি অধ্যায় যার প্রথম অধ্যায়টিই শুধু মাণ্ডুক্য উপনিষদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, আর বাকি তিনটি অধ্যায়ের মাধ্যমে গৌড়পাদ স্বীয় দার্শনিক মত প্রকাশ করেছেন। মাণ্ডুক্য উপনিষদটি একটি অতি ক্ষুদ্র বারোটি মন্ত্রে পঁচিশ পঙক্তির উপনিষদ। গৌড়পাদের মাণ্ডুক্য-কারিকার প্রথম অধ্যায় আগম প্রকরণে মাণ্ডুক্য উপনিষদের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায় বৈতথ্য প্রকরণে জগতের মিথ্যাত্বের প্রমাণ রয়েছে। তৃতীয় অধ্যায় অদ্বৈত প্রকরণে জীব ও ব্রহ্মের ঐক্য সম্পর্কীয় আলোচনা রয়েছে। আর চতুর্থ অধ্যায় অলাতশান্তি প্রকরণে মায়ার কারণে যে জগৎ সত্য বলে প্রতিভাত হয় তারই আলোচনা রয়েছে।
পন্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে, ‘গৌড়পাদের মাণ্ডুক্য উপনিষদের ওপর কারিকা রচনা প্রমাণ করে যে তিনি উপনিষদকে তাঁর দর্শনের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত মনে করতেন কিন্তু সেই সঙ্গে বুদ্ধও যে তাঁর নিকট সমান মর্যাদা ও শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন এ কথা তিনি গোপন করতে চাননি।’ অর্থাৎ এখানে বৌদ্ধ প্রভাব স্পষ্ট। কিভাবে ? রাহুল সাংকৃত্যায়ন বলেন-
‘চতুর্থ অধ্যায়ের (“আলাতশান্তি-প্রকরণ” যা কি-না বস্তুত বৌদ্ধ বিজ্ঞানবাদের এক স্বতন্ত্র গ্রন্থ) প্রারম্ভিক কারিকাতেই তিনি বলেছেন : “আমি দ্বিপদাম্বরকে (=মনুষ্যশ্রেষ্ঠ) প্রণাম করি, যিনি তাঁর আকাশ-সদৃশ বিস্তৃত জ্ঞানের দ্বারা জেনেছেন (সম্বুদ্ধ করেছেন) যে, সকল ধর্মই (= ভাব, বস্তুসমূহ) আকাশসম শূন্য।” এই প্রকরণের ১৯তম কারিকায় পুনরায় বুদ্ধের নাম নেওয়া হয়েছে (“সর্বথা বুদ্ধৈরজাতিঃ পরিদীপিতা।”) এ ছাড়াও তিনি বুদ্ধের উপদেশের কথা দ্বিতীয় কারিকায় (৪/২) আলোচনা করেছেন। ৪২তম কারিকায় (৪/৪২) তিনি আবার বুদ্ধ এবং ৯০তম কারিকায় অগ্রযানের (=মহাযান) নাম গ্রহণ করেছেন। ৯৮ ও ৯৯তম কারিকায় (নাগার্জুনের ন্যায়) বুদ্ধের নাম করে বলেছেন যে বস্তুসমূহ স্বভাবত শুদ্ধ ও অনাবৃত; বুদ্ধ তাকে অধিক স্পষ্টভাবে জানেন। অন্তিম কারিকায় (৪/১০০) আবার তিনি পর্যায়ক্রমে বুদ্ধের বন্দনা করে গ্রন্থ সমাপ্ত করেছেন।’- (দর্শন-দিগদর্শন-২, পৃষ্ঠা-২৫৫)।
তবে এখানে উল্লেখ্য যে, রাহুল সাংকৃত্যায়ন উদ্ধৃত ‘বুদ্ধ’ শব্দটিকে কারিকার তর্জমা বা ব্যাখ্যায় বেদান্তবাদীরা কিন্তু প্রাজ্ঞ বা জ্ঞানী অর্থেই ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ যেমন, অন্তিম কারিকাটি হলো- Read the rest of this entry »
| বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-২১: বাদরায়ণের দার্শনিকমত- মুক্তের বৈভব |
রণদীপম বসু
…
(গ) মুক্তের বৈভব-
ব্রহ্মকে প্রাপ্ত মুক্তাত্মা তাঁর স্ব-স্বরূপে অধিষ্ঠিত হয়। বেদান্তসূত্রে বলা হয়েছে-
‘সংপদ্য আবির্ভাবঃ, স্বেনশব্দাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৪/৪/১)।।
ভাবার্থ : মুক্ত জীব ব্রহ্মকে প্রাপ্ত হয়ে স্ব-স্বরূপেই প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রুতির ‘স্ব’ শব্দ থেকেই বুঝতে পারা যায় যে জীব এবং ব্রহ্ম স্বরূপত অভিন্ন। সুতরাং মুক্তি বা ব্রহ্মলাভের অর্থ হলো স্ব-স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়া (ব্রঃ-৪/৪/১)।
কারণ, ছান্দোগ্যের শ্রুতিতে বলা আছে- Read the rest of this entry »
| বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-২০: বাদরায়ণের দার্শনিকমত- মুক্তিপ্রাপ্তের অন্তিমযাত্রা |
Posted 15/06/2015
on:| বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-২০: বাদরায়ণের দার্শনিকমত- মুক্তিপ্রাপ্তের অন্তিমযাত্রা |
রণদীপম বসু
…
(খ) মুক্তিপ্রাপ্তের অন্তিম যাত্রা-
বলা হয়, ব্রহ্মজ্ঞান প্রাপ্তির পর ভোগোন্মুখ না হলে পূর্বে ও পরে কৃত পাপ-পুণ্য বিনষ্ট হয়, তারা আর ব্রহ্মবিদকে স্পর্শ করতে পারে না। কিন্তু যে পাপ-পুণ্য ভোগোন্মুখ অর্থাৎ প্রারব্ধ হয়ে গেছে সেসব ভোগ করেই মোক্ষলাভ করতে হয়। বাদরায়ণ বলেন-
‘ভোগেন তু ইতরে ক্ষপয়িত্বা সম্পদ্যতে’।। (ব্রহ্মসূত্র-৪/১/১৯)।।
ভাবার্থ : ভোগের দ্বারা পাপ এবং পুণ্য উভয়প্রকার প্রারব্ধ ফল ক্ষয় করে ব্রহ্মজ্ঞ ব্রহ্মের সাথে একত্ব অনুভব করেন। ব্রহ্মবিদ্ ব্রহ্মই হয়ে যান (ব্রঃ-৪/১/১৯)।
এভাবে ভোগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রারব্ধ কর্মরাশি নষ্ট বা নিঃশেষ হলে পরই মুক্ত আত্মা ব্রহ্মের সাথে একত্ব লাভ করতে শরীর ত্যাগ করে। মুক্ত আত্মার এই শরীর ত্যাগ একটি ক্রমপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে থাকে। প্রথমে বাক্ বা বাণী মনের মধ্যে লীন হয়, মন প্রাণের মধ্যে লয়প্রাপ্ত হয়, প্রাণ আত্মায় এবং আত্মা মহাভূতে। বেদান্তসূত্রে বলা হয়েছে- Read the rest of this entry »
| বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-১৭ : বাদরায়ণের দার্শনিক মত- কর্মফল ও পুনর্জন্ম |
রণদীপম বসু
…
২.২.০৫ : কর্মফল ও পুনর্জন্ম
.
বেদান্তসূত্রে সৃষ্টিকর্তা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, জগৎকে সৃষ্টির জন্য ব্রহ্মকেও জীবের কর্মের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। কেননা, এই সৃষ্টিজগৎ আপ্তকাম ব্রহ্মের লীলা (ব্রহ্মসূত্র-২/১/৩৩) হলেও, জগৎ-স্রষ্টা হিসেবে ব্রহ্মর পক্ষপাতিত্ব ও নিষ্ঠুরতার আপত্তি উত্থাপিত হয়। বস্তুত জগতে- মানব সমাজে- যে বৈষম্য দেখা যায়, অনেকেই শ্রম করতে করতে অনাহারে মৃতপ্রায় হলেও কেউ কেউ বিনা পরিশ্রমেই অন্যের শ্রমের ফল ভোগ করে বিলাসী জীবন কাটায়। তাদের দেখেই পুরোহিতবর্গ দেবলোকের কল্পনা করেছেন। আবার মনুষ্য থেকে ক্ষুদ্রতম কীট পর্যন্ত প্রাণিজগতে যে ভীষণ সংহার দেখা যায় যায় তা জগৎ-স্রষ্টা ব্রহ্মকে বড়ই হৃদয়হীন বলে প্রমাণ করে, এবং তার থেকে আত্মরক্ষার জন্যই উপনিষদে পূর্বজন্মকৃত কর্মসিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়েছে- Read the rest of this entry »
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ