Archive for the ‘বৌদ্ধদর্শন’ Category
- In: জৈনদর্শন | দর্শন | বই-পত্র | বৌদ্ধদর্শন
- 2 Comments
চার্বাকেতর ভারতীয় দর্শন-১ম খণ্ড
(জৈন ও বৌদ্ধ দর্শন)
…
ভারতের প্রাচীনতম অসনাতন নাস্তিক্য ধর্মদর্শনের অন্যতম হচ্ছে জৈন ও বৌদ্ধ দর্শন। কিন্তু একান্তই ধর্মবাদী দর্শন হয়েও এ দুটো দর্শন সম্প্রদায়কে তৎকালীন ব্রাহ্মণ্যবাদীরা কেন নাস্তিক্যদর্শন হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন তা কৌতুহলজনক বৈকি। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে যখন উপনিষদীয় চিন্তাধারা কর্মমীমাংসা ও ব্রহ্মমীমাংসার বিরোধে ধর্মসংকটের ন্যায় তত্ত্বসংকটের সম্মুখীন হয় তখন প্রায় একইসময়কালে জৈন বর্ধমান মহাবীর ও শাক্যবংশীয় রাজপুত্র সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধের কঠোর তপস্যালব্ধ এ দুটি বেদবিরোধী সম্প্রদায় দর্শনের আঙিনায় আবির্ভূত হয়। উপনিষদীয় পরিমণ্ডলে থেকেও ভারতীয় দর্শনের এ দুটি ধর্মবাদী সম্প্রদায় বেদভিত্তিক উপনিষদীয় চিন্তাধারার বিরোধিতায় নেমে সাধারণ মানুষের বোধগম্য এক আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার প্রবর্তন করেন। এই আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা বেদভিত্তিক না হয়েও সাধারণ মানুষের আধ্যাত্মিক জিজ্ঞাসা নিবৃত্তির সহায়ক হয়েছিলো। নিরীশ্বরবাদী হওয়া সত্ত্বেও উচ্চমানের আধ্যাত্মিকতায় ধীরে ধীরে এই চিন্তাধারার প্রভাব এতো আকৃষ্ট ও বিস্তার লাভ করেছিলো যে ভারতের সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি ধর্মজীবনকেও তা আলোড়িত করেছিলো। জনমানসে অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করেছিলো বলেই বেদানুসারী হিন্দু দর্শনে এই মতবাদগুলি খণ্ডনের জন্য বিশেষ যত্ন লক্ষ্য করা যায়।
| অনাত্মবাদী বৌদ্ধদর্শন-০৮ : বৌদ্ধ ন্যায় বা প্রমাণতত্ত্ব |
-রণদীপম বসু
…
(…আগের পর্বের পর)
…
৫.০ : বৌদ্ধ প্রমাণতত্ত্ব
…
বৌদ্ধমত অনুযায়ী অবিদ্যা বা মিথ্যাজ্ঞান জরা-মরণাদির মূল কারণ। তাই নির্বাণার্থীর প্রথম কাজ হলো অবিদ্যা দূরীকরণ। আর সম্যক্ জ্ঞানের দ্বারাই অবিদ্যার নাশ হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই বৌদ্ধমতে সর্ববিধপুরুষার্থ লাভের একমাত্র উপায় হলো সম্যক্ জ্ঞান অর্জন। চারটি বৌদ্ধ সম্প্রদায় মাধ্যমিক, যোগাচার, সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক তাঁদের নিজ নিজ চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে বুদ্ধ-বচনের তাৎপর্য গ্রহণ করেছেন। এর ফলে কোন কোন বিষয়ে তাঁদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে কোন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ই নিত্য স্থায়ী জ্ঞাতারূপে আত্মাকে স্বীকার করেননি।
বৌদ্ধ দর্শনের বিবর্তনের প্রথম পর্বে আমরা পাই সর্বাস্তিবাদী সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক সম্প্রদায়। এই দুই সম্প্রদায় বস্তুতান্ত্রিক হলেও স্থায়ীরূপে প্রতীত বস্তুকে পৃথক পৃথক ধর্মের দ্বারাই ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের মতে ধর্ম পৃথকভাবে সৎ, ধর্মের দ্বারা গঠিত স্থায়ী বস্তু অসৎ। যোগাচার ও মাধ্যমিক সম্প্রদায়ও এই ব্যাপারে একমত। মাধ্যমিক সম্প্রদায় পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে জাগতিক বস্তুর জ্ঞানের মূল্যকে যদিও অস্বীকার করেছেন, তবুও ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে জাগতিক বস্তুর জ্ঞানের মূল্যকে অস্বীকার করেননি। জ্ঞানতত্ত্বে তাঁদের এই অবস্থান অদ্বৈত-বেদান্ত সম্প্রদায়ের জ্ঞানতত্ত্বের সঙ্গে তুলনীয়। অদ্বৈত বেদান্ত পারমার্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে জগৎকে মিথ্যা বলে মনে করলেও জাগতিক বিষয়ের জ্ঞানের ব্যাপারে ভাট্ট-মীমাংসাসম্মত জ্ঞানতত্ত্বকে স্বীকার করেছেন।
এ প্রেক্ষিতে বৌদ্ধ জ্ঞানতত্ত্বের বিচারে বৌদ্ধাচার্য বসুবন্ধু, দিঙনাগ, ধর্মকীর্তি, শান্তরক্ষিত ও কমলশীল প্রবর্তিত প্রমাণতত্ত্বই বৌদ্ধ প্রমাণতত্ত্ব রূপে গ্রহণ করা যায়। এই প্রমাণতত্ত্ব একাধারে যোগাচার-সৌত্রান্তিক-বৈভাষিক প্রমাণতত্ত্ব রূপে গৃহীত হয়েছে। বসুবন্ধুর ‘বাদবিধি’, দিঙনাগের ‘প্রমাণ-সম্চ্চুয়’, ধর্মকীর্তির ‘ন্যায়বিন্দু’ ও ‘প্রমাণবার্ত্তিক’, শান্তরক্ষিতের ‘তত্ত্বসংগ্রহ’ বৌদ্ধ প্রমাণতত্ত্বের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আকরগ্রন্থ।
বৌদ্ধমতে প্রমাণ
বৌদ্ধরা সম্যক্ জ্ঞানকেই প্রমাণ বলেছেন। সম্যক্ জ্ঞান হলো যথার্থ জ্ঞান। বৌদ্ধ দার্শনিক ধর্মকীর্তি তাঁর ‘ন্যায়বিন্দু’তে বলেছেন- Read the rest of this entry »

| অনাত্মবাদী বৌদ্ধদর্শন-০৭ : সর্বাস্তিবাদ- সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক মত |
-রণদীপম বসু
…
(…আগের পর্বের পর)
…
৪.৩ : সর্বাস্তিবাদী বৌদ্ধ দর্শন : সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক মত (Buddhism: Soutrantik-Boibhashik
.
সৌত্রান্তিক ও বৈভাষিক মত হচ্ছে হীনযান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্তর্গত সর্বাস্তিবাদের দু’টি রূপ। এই দুই বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উদ্ভব সর্বাস্তিবাদে এবং উভয়ের প্রাচীন নাম ছিলো সর্বাস্তিবাদ, যাঁরা হীনযান বৌদ্ধের আঠারোটি প্রাচীন সম্প্রদায়ের অন্যতম। বুদ্ধের পরিনির্বাণের (৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব) পরবর্তী চার বা পাঁচ শতক ধরে এই সর্বাস্তিবাদ বিকশিত ও পরিপুষ্ট হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়। ‘সর্বাস্তি’ নামের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ‘সবকিছু আছে’, মানে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত বা অনাগত এই তিন কালেই সমস্ত কিছু বিদ্যমান এরূপ ধারণা। সর্বাস্তিবাদ সম্প্রদায়টি বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম ভারতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে প্রভাব বিস্তার করেছিলো। Read the rest of this entry »

| অনাত্মবাদী বৌদ্ধদর্শন-০৬ : (মহাযান) যোগাচার বৌদ্ধদর্শন- বিজ্ঞানবাদ |
-রণদীপম বসু
…
(…আগের পর্বের পর)
…
৪.২ : যোগাচার বৌদ্ধদর্শন : বিজ্ঞানবাদ
.
মহাযান বৌদ্ধধর্মের আরেকটি প্রধান সম্প্রদায় হচ্ছে যোগাচার (yogachara) বা বিজ্ঞানবাদ ভাববাদী সম্প্রদায় (idealistic school)। এই সম্প্রদায় থেরাবাদী বৌদ্ধধর্মের পূর্ণ বস্তুবাদ (realism) এবং মাধ্যমিক সম্প্রদায়ের ব্যবহারিক বস্তুবাদকে প্রত্যাখ্যান করে এক অধিক জটিল অবস্থা স্বীকার করে। এই মতানুসারে, মানুষ যা প্রত্যক্ষ করে তার অস্তিত্ব নেই, বিষয় জ্ঞান হতে অভিন্ন এবং জ্ঞানভেদে বাসনাবৈচিত্র্য হচ্ছে কারণ। বিজ্ঞান বা চেতনাকেই একমাত্র সত্য বলে গ্রহণ করে বলে এই মতবাদকে বলা হয় বিজ্ঞানবাদ। আবার যোগ ও আচরণের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করায় এই মতবাদকে যোগাচারবাদও বলা হয়। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে এই মতের উত্থান। Read the rest of this entry »
-রণদীপম বসু
…
(…আগের পর্বের পর)
…
৪.১ : মাধ্যমিক বৌদ্ধ দর্শন : শূন্যবাদ (Madhyamik Buddhism Shunyabad)
.
মহাযান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্তর্গত এই মাধ্যমিক মত সর্বাস্তিবাদীর বস্তুবাদ (realism) এবং যোগাচার সম্প্রদায়ের ভাববাদের (idealism) মধ্যবর্তী। এটাও হয়তো মাধ্যমিক নামকরণের অন্যতম কারণ। সাধারণভাবে যদিও বৌদ্ধ দার্শনিক নাগার্জুনকে (১৭৫ খ্রি.) মাধ্যমিক মতের প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করা হয়, তবু নাগার্জুনের আবির্ভাবের পূর্ব থেকেই মহাযান সূত্র-সমূহে শূন্যবাদের বক্তব্য লক্ষ্য করা যায়, তবে তা সুসংবদ্ধ মতবাদ রূপে আত্মপ্রকাশ করেনি। Read the rest of this entry »
- In: বৌদ্ধদর্শন
- 6 Comments
-রণদীপম বসু
…
(…আগের পর্বের পর)
…
৪.০ : বৌদ্ধ দার্শনিক সম্প্রদায় (Schools of Buddhism)
.
খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দিতে সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধের উপদেশকে ভিত্তি করে উত্তরপূর্ব ভারতে বৌদ্ধধর্ম ও দর্শন প্রতিষ্ঠিত হয়। শিষ্যদের মধ্যে বুদ্ধ মৌখিকভাবে উপদেশ দিতেন। জীবদ্দশায় তিনি বৌদ্ধসঙ্ঘ স্থাপন করেন। তবে বুদ্ধ নিজে কোন অধিবিদ্যা বা দার্শনিক আলোচনা পছন্দ করতেন না বলে দার্শনিক প্রশ্নের উত্তরে তিনি নীরব থাকতেন। তাঁর এই নীরবতা পরবর্তীকালের বৌদ্ধ দার্শনিকদের মধ্যে অনেক মতভেদের সৃষ্টি করেছিলো। ফলে বৌদ্ধদর্শনে বিভিন্ন দার্শনিক সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছিলো। ধারণা করা হয় বুদ্ধের জীবদ্দশায় তাঁর অনুগামীদের মধ্যে দার্শনিক প্রশ্নে মতভেদ দেখা দিলেও তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে বুদ্ধের পরিনির্বাণের (৪৮৭ খ্রিষ্টপূর্ব) পর। Read the rest of this entry »
- In: বৌদ্ধদর্শন
- 4 Comments
-রণদীপম বসু
…
(…আগের পর্বের পর)
…
৩.০ : বৌদ্ধমতের দার্শনিক সিদ্ধান্ত (Buddhism and Its Philosophy)
“অনিত্য, দুঃখ, অনাত্ম” (অঙ্গুত্তরনিকায়: ৩/১/৩৪)- এই একটিমাত্র সূত্রেই বুদ্ধের সমস্ত দর্শন গ্রথিত আছে বলে পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়নের অভিমত। এই সূত্রের মূল বক্তব্য হচ্ছে-
‘সর্বং অনিচ্চং, সর্বং দুক্খং, সর্বং অনাত্মং।’ (অঙ্গুত্তরনিকায়-৩/১/৩৪)
অর্থাৎ : যা কিছু সমস্তই অনিত্য, সমস্তই দুঃখ, সমস্তই অনাত্ম।
তার উপর ভিত্তি করেই বর্তমানে তাঁর সমৃদ্ধ ও প্রভাবশালী ধর্মমতের মধ্যে দার্শনিক প্রপঞ্চের যে সন্ধান আমরা পাই তা মূলত বুদ্ধের অনুসারী পরবর্তীকালের মেধাবী দার্শনিকদেরই অবদান। তাঁদের মাধ্যমেই বৌদ্ধদর্শন প্রকৃতপক্ষে দর্শনের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।
Read the rest of this entry »
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ