Archive for the ‘তন্ত্র-সাধনা’ Category
তন্ত্র-সাধনা-১৭ : সমাজে তন্ত্রের প্রভাব
রণদীপম বসু
…
হিন্দুর ধর্মানুষ্ঠানের বিপুলতা প্রকাশ করতে যে প্রবাদ-বাক্যটি আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত, তা হলো– ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’। অথচ স্ত্রী-আচার ব্যতীত এই অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে যা কিছু করা হয়, তাতে বৈদিক পদ্ধতির সংস্রব অত্যন্ত কম। তান্ত্রিক ও পৌরাণিক পূজাপদ্ধতির প্রচলনই হিন্দুসমাজে সমধিক। নিত্য উপাসনার ক্ষেত্রেও ভারতবর্ষের সর্বত্র তন্ত্রেরই আদর বেশি পরিলক্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে শ্রী সুখময় শাস্ত্রী’র ভাষ্যে–
‘ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যগণ বৈদিক পদ্ধতিতে উপনীত হইয়াও পরে তান্ত্রিক দীক্ষা গ্রহণ করিয়া থাকেন। গায়ত্রীর উপাসনা অপেক্ষা তান্ত্রিক দীক্ষায় ইষ্টদেবতার উপাসনাতেই হিন্দুগণ বেশী সময় দিয়া থাকেন। ভয়-ভীতিতে গায়ত্রীর শরণ না লইয়া ইষ্টমন্ত্রকেই বেশী স্মরণ করেন।’
‘বিষ্ণুচক্রচ্ছিন্ন সতীদেহ একান্ন খণ্ডে বিভক্ত হইয়া বেলুচীস্থানের হিঙ্গুলাক্ষেত্র হইতে আসামের কামরূপ পর্যন্ত তান্ত্রিক পীঠস্থানে পরিণত হইয়াছে। একই দেবতা সমগ্র ভারতে পরিব্যাপ্ত হইয়া ভারতীয় হিন্দুর তান্ত্রিক উপাসনার প্রবৃত্তি জাগাইতেছেন।’- (তন্ত্রপরিচয়, পৃষ্ঠা-২০) Read the rest of this entry »
তন্ত্র-সাধনা-১৬ : তন্ত্রের জ্ঞানতত্ত্ব
Posted 11/02/2018
on:তন্ত্র-সাধনা-১৬ : তন্ত্রের জ্ঞানতত্ত্ব
রণদীপম বসু
…
তন্ত্র বিষয়ে এ পর্যন্ত যা আলোচনা করা হয়েছে তার সবই তান্ত্রিক সাধনার কর্ম-কাণ্ড বা সাধন-কাণ্ড বিষয়ক। এবার তন্ত্র-শাস্ত্রের জ্ঞান-কাণ্ড বা দার্শনিক ভাগেরও কিছুটা আলোকপাতের প্রয়োজন রয়েছে।
কর্ম-কাণ্ডের প্রকরণে দেখা যায়, অতি নিম্ন স্তরের উপাসক যেমন দেখতে পান তাঁর উপযোগী উপাসনার পদ্ধতি তন্ত্র-শাস্ত্রে রয়েছে, তেমনি অতি উচ্চ স্তরের সাধকও দেখতে পান যে তাঁর উপযোগী উপদেশও তন্ত্রে কম নেই। হিন্দুশাস্ত্রের অভিনবত্ব এখানেই যে তা কখনও কাউকেও নিরাশ করে না। সব-ধরনের অধিকারীকেই কোলে স্থান দেয়। অধিকারী-ভেদে শাস্ত্রের বিভিন্ন অনুশাসন প্রযুক্ত হয়ে থাকে। অতি সাধারণের ইতু-পুজা, সুবচনীর ব্রত প্রভৃতি কর্ম থেকে কৌল জ্ঞানীর ব্রহ্ম-তত্ত্ব পর্যন্ত সবকিছুই অধিকারী-ভেদে গ্রাহ্য হয়ে থাকে। হিন্দুর তেত্রিশ কোটি দেবতার তাৎপর্যও বোধকরি এখানেই। কেননা, হিন্দুর বহু-দেবতাবাদ ও একেশ্বরবাদকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, অসংখ্য দেবতাকে স্বীকার করেও চরম তত্ত্ব অর্থাৎ ‘একমেবাদ্বিতীয়ম্’ শ্রুতির সাথে কোন বিরোধ ঘটে না। একইভাবে এই সমন্বয় বুদ্ধিকে বিবেচনায় নিয়ে তন্ত্র-শাস্ত্রের উপাসনা-প্রণালীর বিচার করলেও সেই চরম তত্ত্বের অন্যথা হয় না। উপাসনা-প্রণালীর মধ্যে পঞ্চোপাসক তথা শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, সৌর ও গাণপত্য সাধকের ভেদ কল্পিত-মাত্র বলেই মনে হয়। পথের বিভিন্নতায় গন্তব্য স্থল ভিন্ন হয়ে যায় না। সবারই চরম উপেয় এক, অর্থাৎ অভিন্ন। ব্যবহারিক ভেদের দ্বারা তাত্ত্বিক অভেদ কখনও ক্ষুন্ন হয় না। Read the rest of this entry »
তন্ত্র-সাধনা-১৫ : তন্ত্রে মারণ-উচাটন
Posted 21/10/2017
on:তন্ত্র-সাধনা-১৫ : তন্ত্রে মারণ-উচাটন
রণদীপম বসু
…
প্রচলিত ধর্মশাস্ত্রে যেসব আচার-পালন ও আবশ্যিক ক্রিয়াকর্ম ধর্মার্থীদের জন্য মাহাত্ম্যপূর্ণ বলে স্বীকৃত হয়েছে, তান্ত্রিক কৌলাচারীদের জন্য সেসব কর্মকাণ্ডই পরিত্যাজ্য হিসেবে বিবেচিত হতে দেখা যায়। যেমন প্রাণতোষিণীতন্ত্রে বলা হয়েছে–
প্রায়শ্চিত্তং ভৃগোঃ পাতং সন্ন্যাসং ব্রতধারণম্ ।
তীর্থযাত্রাভিগমনং কৌলঃ পঞ্চ বিবর্জয়েৎ।। (প্রাণতোষিণী-ধৃত বচন)
অর্থাৎ : কৌলদের প্রায়শ্চিত্ত, ভৃগুপাত, সন্ন্যাস, ব্রত-ধারণ, তীর্থযাত্রা এই পাঁচটি বিষয়ের অনুষ্ঠান করিবার প্রয়োজন নাই; তাহা একবারে পরিত্যাগ করাই তাহাদের পক্ষে বিধেয়।
তন্ত্র-সাধনা-১৪ : তান্ত্রিক চক্রানুষ্ঠান
রণদীপম বসু
…
কুলাচারী তান্ত্রিক-সাধকেরা চক্র করে দেব-দেবীর সাধনা করে থাকেন। তন্ত্রশাস্ত্রে বিভিন্ন ধরনের চক্রানুষ্ঠানের নানারকম বিধান রয়েছে। তবে সাধকগণের মধ্যে দুই প্রকার চক্রের অনুষ্ঠানই বহুল প্রচলিত বলে জানা যায়– তত্ত্বচক্র বা দিব্যচক্র এবং ভৈরবীচক্র বা স্ত্রী-চক্র। তবে শাস্ত্রের বিধানাযায়ী কুলাচারী ভৈরবীচক্র এবং দিব্যাচারী তত্ত্বচক্রের অনুষ্ঠান করবে। Read the rest of this entry »
তন্ত্র-সাধনা-১৩ : তন্ত্রে ভূতশুদ্ধি ও ষট্চক্র-ভেদ
রণদীপম বসু
…
শাস্ত্রানুসারে উপাসনায় পাঁচপ্রকারের শুদ্ধি বিশেষভাবে করণীয়– আত্মশুদ্ধি, স্থানশুদ্ধি, মন্ত্রশুদ্ধি, দ্রব্যশুদ্ধি ও দেহশুদ্ধি। এসব শুদ্ধি না করলে পূজা-অর্চনাদি নিষ্ফল হয়ে পড়ে। কুলার্ণব-তন্ত্রে বলা হয়েছে–
আত্মা তু ভূতসংশুদ্ধিপ্রাণায়ামাদিভিঃ প্রিয়ে।
ষড়ঙ্গাদ্যখিলন্যাসৈর্দেহশুদ্ধিরিহোদিতা।
দেহশুদ্ধিং বিধায়েথং ততো বৈ স্থাপয়েদসূন্ ।।
অর্থাৎ : ভূতশুদ্ধি, প্রাণায়াম প্রভৃতি দ্বারা আত্মশুদ্ধি হইয়া থাকে। অর্থাৎ তত্ত্বজ্ঞানের আবরক মলের অপসৃতি ঘটে। করন্যাস, অঙ্গন্যাস প্রভৃতি দেহশুদ্ধির হেতু। দেহশুদ্ধির পরে সাধক নিজের অভিনব বিশুদ্ধ প্রাণকে প্রতিষ্ঠিত করিবেন।
তন্ত্র-সাধনা-১২ : তন্ত্রে নৈবেদ্য-উপচার বা বলি-প্রদান
রণদীপম বসু
…
তন্ত্রে ইষ্টদেবতার উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য বা বলি প্রদান ছাড়া পূজা সম্পাদন অচিন্ত্যনীয়। আগেই বলা হয়েছে, বীরাচারীদের সাথে পশ্বাচারীদের বিশেষ পার্থক্য হলো, বীরাচারে মদ্য-মাংসের ব্যবহার আছে, পশ্বাচারে তা নিষিদ্ধ। কিন্তু উভয় আচারেই পশু-বলির বিধান আছে।
এখানে উল্লেখ্য, বলি মানে উৎসর্গ, ইষ্টদেবতার প্রতি সাধকের প্রিয় বস্তুর উৎসর্গ। শাস্ত্রে বলা হয়, বলি দুই প্রকার– রাজসিক ও সাত্ত্বিক। মাংস-রক্তাদিবিশিষ্ট বলিকে রাজসিক, এবং মুদ্গ, পায়েস, ঘৃত, মধু ও শর্করাযুক্ত রক্ত-মাংসাদি বর্জিত বলিকে সাত্ত্বিক বলি বলা হয়। সমাচারতন্ত্রে বলা হয়েছে–
সাত্ত্বিকোবলিরাখ্যাতো মাংসরক্তাদিবর্জিতঃ।- (সমাচারতন্ত্র)
অর্থাৎ : রক্ত-মাংসাদি বর্জিত বলি সাত্ত্বিক বলি বলিয়া উক্ত হইয়াছে।
তন্ত্র-সাধনা-১১ : তন্ত্রে পূজা
Posted 18/10/2017
on:*
তন্ত্র-সাধনা-১১ : তন্ত্রে পূজা
রণদীপম বসু
…
এমনিতে সাধারণ হিন্দুগৃহস্থের ধর্মজীবনে পূজা এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। কেবল দিন বিশেষে ইচ্ছানুসারে অনুষ্ঠেয় নৈমিত্তিক কর্ম হিসেবেই এর গৌরব নয়, অবশ্য করণীয় নিত্য কর্ম রূপেও তা শাস্ত্রে বিহিত। শুধু মঠে মন্দিরে নয়, অনেকের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত দেববিগ্রহের নিত্য নিয়মিত পূজার ব্যবস্থা আছে। বস্তুত পূজা দুই প্রকার– পৌরাণিক ও তান্ত্রিক। পৌরাণিক পূজা অপেক্ষাকৃত সরল– এতে ভূতশুদ্ধি, বিবিধ ন্যাস প্রভৃতির প্রয়োজন হয় না। এই পূজার জন্য দীক্ষিত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। তবে বিশুদ্ধ পৌরাণিক পূজা প্রায়শ দেখা যায় না– অনেক ক্ষেত্রে তা তান্ত্রিক প্রভাবে প্রভাবিত। Read the rest of this entry »
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ