শিব ও লিঙ্গ-০৬ : প্রাচীন সাহিত্যে শিব
Posted 12/03/2018
on:শিব ও লিঙ্গ-০৬ : প্রাচীন সাহিত্যে শিব
রণদীপম বসু
…
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের পরবর্তী কালের যে সব সাহিত্যে রুদ্র ও শিবের উল্লেখ পাওয়া যায় তার মধ্যে পাণিনির অষ্ট্যাধ্যায়ী ও পতঞ্জলির মহাভাষ্য প্রথমেই উল্লেখযোগ্য। এ বিষয়ে অধ্যাপক জিতেন্দ্রনাথ বলেন–
‘পাণিনি আনুমানিক খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর বৈয়াকরণিক, পতঞ্জলি খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের।… পাণিনি তাঁহার ব্যাকরণগ্রন্থের এক সূত্রে (৪, ১, ৪৯) দেবতার এই কয় নামের কথা বলিয়াছেন, যথা– রুদ্র, ভব, শর্ব এবং মৃড়। ইহার সবগুলিই আমরা বৈদিক সাহিত্যে পাই (মৃড় নামটি যজুর্বেদোক্ত শতরুদ্রীয় স্তোত্রে রুদ্রের শত নামের অন্যতম)। এই তালিকায় শিবের নাম পাওয়া না গেলেও, আমরা শিবের নাম অপর এক সূত্রে পাই। পাণিনির ‘শিবাদিভ্যোন’ সূত্রে (৪, ১, ১১২) শিবের উল্লেখ রহিয়াছে। পতঞ্জলি তাঁহার মহাভাষ্যে রুদ্র ও শিবের নাম কয়েকবার করিয়াছেন। রুদ্র সম্বন্ধে তিনি দুইবার বলিয়াছেন যে দেবতার উদ্দেশে পশুবলি হইত; অপর দুই স্থলে রুদ্রের কল্যাণকর ভেষজের কথা বলা হইয়াছে (শিবা রুদ্রস্য ভেষজী)। শিবের উল্লেখও তিনি দুইবার করিয়াছেন। পাণিনির সূত্র ‘দেবতাদ্বন্দ্বে চ’ (৬, ৩, ২৬) ও ইহার কাত্যায়ন কৃত বার্তিক ‘ব্রহ্মপ্রজাপত্যাদীনাং চ’ এর ভাষ্যকালে তিনি দ্বন্দ্ব সমাসের তিনটি উদাহরণ দিয়াছেন, যথা ব্রহ্ম-প্রজাপতি, শিব-বৈশ্রবণৌ এবং স্কন্দ-বিশাখৌ। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলিয়াছেন যে এইরূপ দেবতার নাম সম্বলিত দ্বন্দ্ব সমাস বেদে পাওয়া যায় না। এ উক্তি যথার্থ, কারণ প্রজাপতি ব্যতিরেকে অপর দেবতা কয়টি অবৈদিক। মহাভাষ্যকার এই প্রসঙ্গেই শিব, বৈশ্রবণ, স্কন্দ ও বিশাখ দেবতাদিগকে লৌকিক দেবতানিচয়ের অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন। পাণিনির অন্যতম সূত্র ‘জীবিকার্থে চাপণ্যে’ (৫, ৩, ৯৯)-র ভাষ্যকালে পতঞ্জলি স্কন্দ ও বিশাখের মূর্তির সহিত শিবের মূর্তির কথা বলিয়াছেন। পাণিনির আর এক সূত্রের (৫, ২, ৭৬) ব্যাখ্যানে তিনি শিবের ভক্তদিগেরও উল্লেখ করিয়াছেন।’– (পঞ্চোপাসনা, পৃষ্ঠা-১৩০-৩১)
এবং এ বিষয়ে অন্যত্র আলোচনা করতে গিয়ে প্রাসঙ্গিকক্রমে তিনি আবার বলেন,– ‘ভক্তিকেন্দ্রিক ধর্ম-সম্প্রদায়গুলি সাধারণতঃ কোনও বৈদিক দেবতাবিশেষকে আশ্রয় করিয়া আত্মপ্রকাশ করে নাই। শিব ও যক্ষনাগাদি লৌকিক দেবতা-গোষ্ঠী বা বাসুদেব-কৃষ্ণ প্রভৃতি মনুষ্যপ্রকৃতি দেবতানিচয়কে কেন্দ্র করিয়াই এই সকল উপাসকমণ্ডলী ক্রমশঃ গঠিত হয়। খৃষ্ঠপূর্ব যুগের প্রসিদ্ধ বৈয়াকরণিক পতঞ্জলি নানাবিধ দেবতাকে প্রধানতঃ দুই ভাগে বিভক্ত করিয়াছিলেন। তাঁহার মহাভাষ্যে পাণিনির অন্যতম সূত্র ‘দেবতাদ্বন্দ্বে চ’ (৬, ৩, ২৬) ব্যাখ্যা করিবার কালে এই বিভাগ দুইটির ‘বৈদিক’ ও ‘লৌকিক’ নামকরণ করিয়াছেন। প্রথমটির উদাহরণস্বরূপ তিনি ব্রহ্মা ও প্রজাপতির নাম করিয়াছেন, এবং দ্বিতীয় বিভাগভুক্ত দেবতাগণের মধ্য হইতে শিব ও বৈশ্রবণ (যক্ষপতি কুবেরের অন্য নাম)-কে বাছিয়া লইয়াছেন। ব্রহ্মা-প্রজাপতিকে কেন্দ্র করিয়া কোনও ভক্তসম্প্রদায় গড়িয়া উঠে নাই, কিন্তু শিব ও গণপতিকে (গণপতিই যক্ষনাগের সংমিশ্রণ) কেন্দ্র করিয়া ভক্ত সম্প্রদায় সংগঠিত হয়।’– (পঞ্চোপাসনা, পৃষ্ঠা-১৩)
তার মানে, ইতঃপূর্বে আমরা শিবের একটা বৈদিক ধারার পরিচয় খোঁজার চেষ্টা করলেও বস্তুত প্রাচীন রচনাকার-কর্তৃক প্রাক্-আর্য জনগোষ্ঠীর লৌকিক দেবতা হিসেবেই তাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে করে ইতঃপূর্বে প্রাক্-বৈদিক অনার্য বিশ্বাস বা ধারণাসম্মত যে প্রাচীন দেবসত্তায় আদিম উপাসনার অনুমান করা হয়েছে পাণিনি ও পতঞ্জলির সাক্ষ্য থেকে তারই সম্ভাব্য সত্যতার আভাস মেলে। প্রকৃতপক্ষে শৈবধারায় একটি বেদসম্মত এবং একটি বেদবাহ্য রূপের পরিচয় আমরা পেয়ে থাকি। এক ধারায় তিনি ব্রহ্মণপ্রিয়, ধাতা, বিধাতা, ব্রহ্মা বিষ্ণুরও আদি ইত্যাদি যে সব কথা মহাভারতাদি, পুরাণ ও বেদে বলা হয়েছে তার মধ্যে আছে বেদগ্রাহ্য রূপের পরিচয়। অন্যদিকে দক্ষযজ্ঞের কাহিনী, ত্রিপুরদহন কাহিনী ও দর্শন এবং শিবের গণদেবতা সংক্রান্ত ধারণার মধ্যে অবৈদিক স্বরূপটিকে অনুসন্ধান করতে হবে বলে মনে হয়।
মহাভারতের একটি আখ্যানে দেখা যায়, দক্ষ প্রজাপতি রুদ্র শিবকে বাদ দিয়ে যজ্ঞ আরম্ভ করলে দধীচি মুনি তাঁকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে শিবহীন যজ্ঞ পণ্ড হয়ে যাবে। কিন্তু দক্ষ তা শুনলেন না। তিনি বললেন–
সন্তি নো বহবো রুদ্রা শূলহস্তাঃ কপর্দিনঃ।
একাদশ স্থানগতা নাহং বেদ্মি মহেশ্বরম্ ।। (মহাভারত-১২/২৮৩/২০)
অর্থাৎ : একাদশ স্থানে বাসকারী শূল ও জটাধারী একাদশ রুদ্র আমাদের আছেন, এছাড়া তো অন্য কোন মহেশ্বরের কথা আমরা জানি না।
এ থেকেই বোঝা যায় যে এই রুদ্র-শিব তখনও যজ্ঞকারী আর্য-ধর্মের বাইরে ছিলেন। আর মহাভারতোক্ত পাশুপত ব্রতের বিবরণ থেকেও তাঁকে বেদবাহ্য বলেই মনে হয়।
‘একথা ঠিক যে শতরুদ্রীয় মন্ত্রে পশুপতির কথা আছে এবং তিনি বৈদিক দেবমণ্ডলীর অন্তর্গত, কিন্তু তাঁর পূজাবিধির দিক থেকে বৈদিক ও অবৈদিক দুটি স্পষ্ট ধারা ছিল। পাশুপত শৈবরা বর্ণাশ্রম মানতেন না এবং তাদের উৎকট আচার কিছু ছিল। বর্ণাশ্রমীরা এসব সহ্য করতেন না। তাই শৈব পাশুপতদের প্রতি অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা বিদ্বেষ প্রকাশ করেছেন– ‘শৈবং পাশুপতং দৃষ্টবা সচেলম্ জলমাবিন্নেত্’ ইত্যাদি উক্তি তার প্রমাণ। পাশুপত ধর্মই সর্বপ্রাচীন শৈবধর্ম বলে মনে হয়।’– (ড. উদয়চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়/ ভূমিকা, লিঙ্গ পুরাণ, পৃষ্ঠা-১৭)
শৈব-সম্প্রদায় প্রসঙ্গে এই পাশুপত ও অন্যান্য সম্প্রদায় বিষয়ে ভিন্নভাবে আলোচনার সুযোগ রয়েছে। আমরা বরং এ-মুহূর্তে প্রাচীন সাহিত্যে শিব বিষয়ক আরও কিছু নজির খুঁজে পেতে পারি। মহাশয় অক্ষয় কুমার দত্ত তাঁর ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ গ্রন্থের দ্বিতীয় ভাগে শৈব-সম্প্রদায় বিষয়ক প্রাসঙ্গিক আলোচনায় বলছেন–
‘অশোক ও জলোক নামে কাশ্মীর-রাজ্যের দুইটি রাজা ছিলেন। শ্রীমান হ,হ,উইলসনের অবলম্বিত বিচারপদ্ধতি অনুসারে স্থূল রূপ গণনা করিয়া দেখিলে, তাঁহারা খ্রীঃ পূঃ সপ্তম বা ষষ্ঠ শতাব্দীতে বিদ্যমান ছিলেন বলিতে হয়। তাঁহারা উভয়েই অত্যন্ত শিব-ভক্ত বলিয়া কীর্তিত হইয়াছেন।
বিজয়েশ্বরনন্দীশক্ষেত্রজ্যেষ্টেশপূজনে।
তস্য সত্যগিরো রাজ্ঞঃ প্রতিজ্ঞা সর্ব্বদাভবত্ ।। (রাজতরঙ্গিণী প্রথম তরঙ্গ)
বিজয়েশ্বর, নন্দীশ ও ক্ষেত্র জ্যেষ্ঠেশ শিবের অর্চনায় সেই সত্যবাদী (জলোক) রাজা সতত প্রতিজ্ঞারূঢ় ছিলেন।
কেবল রাজতরঙ্গিণীর এই বচন এ বিষয়ের একমাত্র প্রমাণ। কিন্তু এ-কথা বলিতে পারা যায় যে, যদি ভারতবর্ষের দক্ষিণখণ্ডে খ্রীঃ পূঃ পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতাব্দীতে শিবের আরাধনা প্রচারিত হইয়া থাকে, তাহা হইলে উহার উত্তরখণ্ডে ঐ সময়ে ঐ ধর্ম প্রচলিত থাকা সর্বতোভাবেই সঙ্গত, তাহার সন্দেহ নাই। উল্লিখিত গ্রন্থে উহারও পূর্বে কাশ্মীরপ্রদেশে শৈবধর্ম বিদ্যমান ছিল বলিয়া বর্ণিত হইয়াছে। কিন্তু তাহা প্রমাণান্তর দ্বারা সিদ্ধ না হইলে নিশ্চিত বলিয়া পরিগৃহীত হইতে পারে না।’– (ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়)
তবে খুব বেশি না হলেও, প্রাচীন বৌদ্ধ সাহিত্যে যে বিভিন্ন স্থলে শিবের উল্লেখ পাওয়া যায় বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে তার প্রমাণ মেলে। ‘ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস’ গ্রন্থে নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এসবের নজির টেনে বলেন–
‘বৌদ্ধ দীঘনিকায় গ্রন্থে ঈশানের উল্লেখ আছে, এছাড়া বিভিন্ন পালি গ্রন্থে কখনও কখনও শিবের নাম পাওয়া যায়। ডঃ জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে বৌদ্ধ নিদ্দেস গ্রন্থে দেব নামক যে দেবতাটির উপাসকদের কথা বলা হয়েছে, আসলে তিনি শিব কেননা শ্বেতাশ্বতরে শিবের একটি নাম দেব। পরবর্তীকালে হিউয়েন সাং শিবকে দেব বা ঈশ্বরদেব বলে উল্লেখ করেছেন। আনুমানিক খ্রীষ্টীয় চতুর্থ শতকে রচিত বৌদ্ধ মহামায়ূরী গ্রন্থে শিবপুর এবং ভীষণ নামক নগরদ্বয়ের পালক-দেবতা হিসাবে শিব ও শিবভদ্রের উল্লেখ আছে। গ্রীক লেখকগণ এদেশে শিবপূজার ব্যাপকতা লক্ষ্য করেছিলেন এবং নিজেদের দিওনিসোসের সঙ্গে তাঁর সাদৃশ্য কল্পনা করেছিলেন।’– (ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস, পৃষ্ঠা-২০০)
গ্রীক লেখকদের এরকম আরেকটি নমুনার কথা জানা যায় মহাশয় অক্ষয় কুমার দত্তের ভাষ্যে। তিনি বলছেন–
‘খ্রীষ্টাব্দ আরম্ভের পূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে গ্রীক্ সম্রাট আলেকজন্ডার একজন গ্রীক, মহারাজ চন্দ্রগুপ্তের সভায় দূত-স্বরূপে উপস্থিত হন। ঐ সময়ে তাঁহাদের সমভিব্যাহারী বিচক্ষণ ব্যক্তিরা হিন্দুদের আচার-ব্যবহার ধর্মাদি যেরূপ দর্শন করেন, গ্রীসদেশীয় বহুতর গ্রন্থকারদিগের পুস্তকে তাহার সবিস্তার বৃত্তান্ত বিনিবেশিত আছে। তাঁহারা লিখেন, হিন্দুরা বেকস্ ও হর্কিউলিস্ নামক দুই দেবতার বহুপ্রকার উপাসনা করিয়া থাকেন। কিন্তু এই দুইটি দেবতা গ্রীকদের উপাস্য, হিন্দুদের নয়। বোধহয়, তাঁহারা হিন্দুদিগের যে দুইটি দেবতাকে আপনাদের বেকস্ ও হর্কিউলিস্ দেবতার সদৃশ জ্ঞান করিয়াছিলেন, তাঁহাদিগকেই ঐ দুই নাম দিয়া গিয়াছেন। ভারতবর্ষীয় মহাদেবের ন্যায় গ্রীসদেশীয় বেকস্-দেবেরও লিঙ্গ-পূজা বিস্তৃতরূপে প্রচলিত ছিল। অতএব গ্রীকেরা মহাদেবকেই বেকস্ দেব বলিয়া উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। এ-কথা সর্বতোভাবে অনুমান-সিদ্ধ বা নিতান্ত সম্ভাবিত বলিতে পারা যায়।’– (ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়, পৃষ্ঠা-৩-৪)
উল্লেখ্য, গ্রীকবীর আলেকজান্ডার ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বকালে ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। ঐ সময়কালে ভারতবর্ষে যে শিব পূজার প্রচলন ছিল তার ঐতিহাসিক প্রমাণ উল্লেখ করতে গিয়ে অধ্যাপক জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন–
‘ভারতবর্ষের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে যে শিব পূজার বিশেষ প্রচলন ছিল, উহা আমরা সুপ্রাচীন বৈদেশিক গ্রন্থ হইতে জানিতে পারি। আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানের বিদেশী ঐতিহাসিকগণ বলিয়াছেন যে পঞ্চনদ প্রদেশের একাংশে, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা নদীর (ঝিলাম ও চিনাব নদী, তাঁহাদের গ্রন্থে এই দুই নদীর নাম–Hydasoes ও Acesines, সংস্কৃত বিতস্তা এবং অসিক্লীর গ্রীক রূপ) সঙ্গমের নিকট শিবয় (শিবি) (Sibae, Siboi) নামক এক জাতীয় লোক বাস করিত। ইহারা খুব সম্ভব শিবপূজক ছিল…। হেক্যাটিয়স নামক খৃষ্টপূর্ব যুগের এক গ্রীক গ্রন্থকার বলিয়াছেন যে বৃষভ (শিবের পশুমূর্তি, পরে তাঁহার বাহন রূপে কল্পিত) গন্ধার প্রদেশের অধিবাসীদিগের অন্যতম প্রধান দেবতা ছিল। বৃষরূপী দেবতার মূর্তি পঞ্জাব ও উত্তর পশ্চিম প্রদেশের যবন, শক, পহ্লব প্রভৃতি সেখানকার প্রাচীন যুগের (খৃঃ পূঃ দ্বিতীয় শতক হইতে খৃষ্টীয় প্রথম শতাব্দী) বৈদেশিক রাজগণের রৌপ্য ও তাম্র মুদ্রায় উৎকীর্ণ দেখিতে পাওয়া যায়। শকরাজ মোঅস (Maues), পহ্লব রাজ গন্ডোফেরিস (Gondophares) এবং কুষাণ রাজ বিম কদফিস (Wema Kadphises) ও কণিষ্ক প্রভৃতির মুদ্রায় শিবের মনুষ্য মূর্তি খোদিত দেখা যায়। এই সমস্ত সাহিত্য ও প্রত্নতত্ত্ব গত প্রমাণ বৌদ্ধ গ্রন্থ মহামায়ূরী ও মহাভষ্যের উক্তি পূর্ণরূপে সমর্থন করে।’– (পঞ্চোপাসনা, পৃষ্ঠা-১৩১-৩২)
এ প্রেক্ষিতে জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যত্র আরও বলছেন– ‘উজ্জয়িনীতে প্রাপ্ত খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের একটি লেখবিহীন তাম্রমুদ্রার একদিকে আছে শিব দেবতার দণ্ড কমণ্ডলুহস্ত দ্বিভুজ মনুষ্য মূর্তি, পার্শ্বে তাঁহার বাহন বৃষভ (দেবতার পশুমূর্তি) এবং অপরদিকে দেখা যায় স্থলবৃক্ষের সম্মুখে তাঁহার অনুরূপ লিঙ্গ মূর্তি। মথুরা, লক্ষ্ণৌ প্রভৃতি উত্তর প্রদেশস্থ সহরের চিত্রশালায় খৃষ্টীয় প্রথম তিন শতাব্দীর যোনিপট্টবিহীন এমন সব শিবলিঙ্গ রক্ষিত আছে, যেগুলি হইতে উচ্ছ্রিত মুক্তমুখচর্ম মনুষ্যলিঙ্গের সহিত তাহাদের আশ্চর্য সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এই সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হইতে শিবলিঙ্গ পূজার প্রকৃত তাৎপর্য বুঝা যায়। কেহ কেহ মনে করেন যে লিঙ্গপূজা বৌদ্ধ স্তূপপূজা হইতে উদ্ভূত হইয়াছিল। আদি মধ্য ও মধ্যযুগের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বুদ্ধ পূজা সংক্রান্ত স্তূপগুলির মেধি ও দীর্ঘাকৃতি অণ্ডের সহিত গুপ্তপরবর্তী কালের রূপান্তরিত শিবলিঙ্গের আপাতদৃষ্টিতে কিঞ্চিৎ সাদৃশ্য অনুভূত হয়। কিন্তু মনে রাখা আবশ্যক যে এই দুই বিভিন্ন পূজা প্রতীকের কোনওটিই গুপ্ত বা প্রাক্-গুপ্ত কালের নহে। প্রাক্-গুপ্তযুগের উপরিলিখিত এবং অনুরূপ অন্যান্য শিবলিঙ্গগুলির আকৃতির বিষয় স্থিরচিত্তে বিবেচনা করিলেই ইহাদের যথার্থ তাৎপর্য সম্বন্ধে কোনও সন্দেহ থাকে না। শিবলিঙ্গ পূজার উৎপত্তি যে এক পিতৃ-দেবতার সৃজন-শক্তিকে কেন্দ্র করিয়াই হইয়াছিল উহা গোপীনাথ রাও মহাশয় বহু অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন পৌরাণিক ও তান্ত্রিক গ্রন্থাদির সাহায্যে প্রমাণ করিতে চেষ্টা পাইয়াছেন (Elements of Hindu Iconography, Vol. II, pp. 61-2)। ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন অধিবাসীদিগের একাংশের মধ্যে প্রচলিত এইরূপ এক বিশেষ ধর্মানুষ্ঠানের জন্য আধুনিক কালের ভারতীয়দিগের মধ্যে কেহ কেহ লজ্জা পাইয়া থাকেন। এ মনোভাব নিতান্ত অস্বাভাবিক নহে। বৈদিক ও উহার পরবর্তী যুগের বহু ভারতীয় মনে হয় এ অনুষ্ঠান সমর্থন করিতেন না। বিশাল মহাভারতের দু একটি অপেক্ষাকৃত অর্বাচীন অংশেই শিবলিঙ্গ পূজার সমর্থন পাওয়া যায়। শিবের আকৃতি বর্ণনা কালে মহাকাব্যকার বলিয়াছেন– ঊর্ধ্বকেশঃ মহাশ্যেপঃ নগ্নো বিকৃতলোচনঃ। অনুশাসন পর্বের কৃষ্ণ-উযপমন্যুসংবাদ পর্বাধ্যায়েই আমরা প্রথম লিঙ্গ ও যোনি পূজার স্পষ্ট সমর্থন পাই। কিন্তু এখানেও লিঙ্গ-যোনির যুক্ত রূপের কোনও স্পষ্ট উল্লেখ নাই,– উহা অনেক পরবর্তী কালের তান্ত্রিক গ্রন্থেই লিপিবদ্ধ আছে।’– (পঞ্চোপাসনা, পৃষ্ঠা-১৩৬-৮)
প্রাচীন ভারতীয় মনীষীদের মধ্যে অনেকে এক বিশিষ্ট ধর্মসম্প্রদায়ের এই মুক্তমুখচর্ম শিশ্নাকৃতির লিঙ্গ পূজা পদ্ধতি সুচক্ষে দেখতেন না এবং এ সম্পর্কে তাঁরা প্রথম দিকে উদাসীনতা ও নিরবতা অবলম্বন করতেন স্বাভাবিক কারণেই। কিন্তু তাঁদের এই উপেক্ষা ও অসমর্থন এই পূজা পদ্ধতিকে অপসারিত করতে যে পারেনি তার প্রমাণ কালক্রমে এই পূজার উত্তরোত্তর শক্তি বৃদ্ধি। এ প্রসঙ্গে জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত হলো–
‘এই শক্তি বৃদ্ধির মূলে তান্ত্রিক উপাসনার ক্রমবিকাশ বর্তমান থাকিলেও, লিঙ্গ প্রতীকের আমূল রূপ পরিবর্তন ঘটায় আপাতদৃষ্টিতে ইহার অশ্লীলতার ভাব সম্পূর্ণ দূরীভূত হইয়া যায়, এবং এই প্রতীক পূজা শৈব ও স্মার্তদিগের মধ্যে অধিকতর প্রিয় হইয়া উঠে। ক্রমশঃ ইহা পূজাপ্রতীক রূপে এত অধিক জনপ্রিয় হইয়া পড়ে যে ইহা প্রতি শিবমন্দিরের গর্ভগৃহে প্রধানতম ও মুখ্য পূজার বস্তু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হইতে থাকে। শিব দেবতার অসংখ্য মনুষ্যমূর্তি, তাঁহার অগণিত লীলার প্রকাশ, এই সব মন্দিরের বিভিন্ন অংশে গৌণ স্থান অধিকার করিতে বাধ্য হয়। যাঁহারা ঈলোরার কৈলাস মন্দির দেখিয়াছেন তাঁহারা আমার এই উক্তির পূর্ণ সমর্থন করিবেন। সুবৃহৎ গর্ভগৃহে বিশালকায় লিঙ্গের ভগ্নাবশেষ অবস্থিত, আর মন্দিরের অন্যান্য অংশে দেবতার অগণিত লীলামূর্তি রক্ষিত আছে। ভুবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দিরের মূর্তিসংস্থানও এই রূপ। শিবলিঙ্গ পূজার এত অধিক জনপ্রিয়তা সম্ভব হইয়াছিল গুপ্ত ও তৎপরবর্তী যুগ হইতে, কারণ গুপ্তকাল হইতেই লিঙ্গ প্রতীকের আকৃতি পরিবর্তিত হইতে থাকে, এবং ক্রমশঃ ইহা এমন রূপ ধারণ করে যাহাতে ইহার আদি প্রকৃতি বহুলাংশে প্রচ্ছন্ন হয়। কিন্তু শিবলিঙ্গ নির্মাণের বিধি প্রসঙ্গে মধ্যযুগীয় মূর্তিশাস্ত্রে উহার ঊর্ধ্বাংশে (রুদ্র বা পূজাভাগে) ব্রহ্মসূত্র পাতনের যে ব্যবস্থা লিখিত আছে উহাতেই ইহার প্রকৃত রূপ সম্বন্ধে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। শিবলিঙ্গ পূজা বিষয়ক আরও একটি কথা এ প্রসঙ্গে বলা আবশ্যক। বহু প্রাচীনকাল হইতে স্বর্গত পিতৃপুরুষাদির স্মারক হিসাবে স্তম্ভ স্থাপন প্রথা পৃথিবীর সর্ব দেশে প্রচলিত আছে। ভারতবর্ষেও ইহার ব্যতিক্রম হয় নাই। শিবলিঙ্গ পূজার সর্বাধিক প্রচলনের মূলে এই প্রথাও মনে হয় কিছু পরিমাণে কার্যকরী হইয়াছিল। সাধু মহাত্মাদিগের সমাধি বা শ্মশানমন্দিরে এবং স্বর্গত নৃপতিবর্গের (বিশেষ করিয়া রাজপুতানা অঞ্চলে) শ্মশানক্ষেত্রে তাঁহাদের নামে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা ও পূজার ব্যবস্থা এ বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করে।’- (পঞ্চোপাসনা, পৃষ্ঠা-১৩৮-৯)
বস্তুত প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই শিব দেবতার, তা সে যে-নামেই হোক বা যে প্রতীকেই হোক, উপাসনার এই আদিম পরম্পরা বহমান ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারই ধারাবাহিকতায় খ্রিস্টপূর্ব কালের কিছু ঐতিহাসিক সাক্ষ্য এই অনুমানকেই প্রতিষ্ঠিত করে এবং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমাদের কাছে তা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর খ্রিস্টোত্তর কালে তা ক্রমে কেবল স্পষ্টতরই নয়, বরং পূর্ণরূপে শিব বা শিবলিঙ্গ পূজার পূর্ণ প্রতিষ্ঠার সাক্ষ্যপ্রমাণ মেলে। যেমন–
‘ধর্মসম্প্রদায়গুলির ইতিহাস আলোচনা প্রসঙ্গে আরও একটি তথ্যের উল্লেখ প্রয়োজন। বরাহমিহির প্রণীত বৃহৎসংহিতা গ্রন্থের দেবমূর্তি প্রতিষ্ঠাপন সংক্রান্ত অধ্যায়ে (সুধাকর দ্বিবেদী সম্পাদিত সংস্করণ, ৫৯ অধ্যায়) বৈষ্ণব, সৌর, শৈব, শাক্ত, ব্রাহ্ম, বৌদ্ধ এবং জৈন সম্প্রদায়সমূহের প্রধান প্রধান দেবমূর্তিগুলির বিভিন্ন মন্দিরের গর্ভগৃহসমূহে প্রতিষ্ঠা করা সম্বন্ধে কয়েকটি সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে। বরাহমিহির বলিতেছেন :
বিষ্ণোর্ভাগবতান্ মগাংশ্চ সবিতুঃ শম্ভোঃ সভস্মদ্বিজান্ ।
মাতৃণামপি মন্ডলক্রমবিদো বিপ্রান্ বিদুর্ব্রহ্মণঃ।।
শাক্যান্ সর্বহিতস্য শান্তমনসো নগ্নান্ জিনানাং বিদু-।
র্বে যং দেবমুপাশ্রিত্য স্ববিধিনা তৈস্তস্য কার্যা ক্রিয়া।।
ইহার অর্থ, ‘বিষ্ণুর (মূর্তি) ভাগবতগণ, সূর্যের মগেরা, শিবের (মূতি-শিবলিঙ্গ) ভস্মমণ্ডিত ব্রাহ্মণগণ (অর্থাৎ পাশুপতেরা), মাতৃকাদিগের মণ্ডলক্রমবিদ্গণ (অর্থাৎ শাক্তেরা), ব্রহ্মার বেদবিদ্ ব্রাহ্মণগণ, সর্বহিতকারী প্রশান্তমন দেবতার (অর্থাৎ বুদ্ধের) শাক্যগণ (বৌদ্ধেরা), জিনদিগের দিগম্বর জৈনগণ– এই বিভিন্ন মূর্তিসকল তত্তং দেবতা-পূজকেরা সেই সেই দেবতা-মূর্তির (প্রতিষ্ঠা) ক্রিয়া নিজ নিজ সম্প্রদায় নির্দিষ্ট বিধি অনুযায়ী করিবেন’।
উৎপলাচার্য এই শ্লোকটির উপর যে ভাষ্য করিয়াছেন, উহা হইতে জানা যায় যে ভাগবতেরা পাঞ্চরাত্র বিধি অনুসারে বিষ্ণুর, মগদ্বিজেরা সৌরদর্শন বিধানানুযায়ী সূর্যের, পাশুপতেরা বাতুলতন্ত্র বা অন্য শৈবতন্ত্রনির্দেশানুসারে শিবের, (তান্ত্রিক) পূজাক্রমবিদ (শক্তি-পূজকগণ) নিজ নিজ কল্পবিহিত ব্যবস্থানুযায়ী বিভিন্ন দেবীমূর্তির, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণেরা বেদোক্ত বিধিদ্বারা ব্রহ্মার, বৌদ্ধেরা পারমিতাক্রমানুসারে বুদ্ধের এবং জৈনেরা জৈনদর্শনানুযায়ী জিনদিগের মূর্তিসকল প্রতিষ্ঠা করিবেন। বৃহৎসংহিতার রচনাকাল আনুমানিক খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী এবং উৎপল খৃষ্টীয় দশম শতাব্দীর লোক ছিলেন। ধর্মসম্প্রদায়গুলির উপরিলিখিত সংক্ষিপ্ত তালিকা হইতে ইহা প্রতীয়মান হয় যে ব্রাহ্মণ্য পঞ্চোপাসনার মধ্যে অন্ততঃ চারিটির, যথা বৈষ্ণব, সৌর, শৈব এবং শাক্তের, সম্যক প্রচলন খৃষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর বহু পূর্বে হইয়াছিল। গণপতির পূজা সে সময়ে কোনও না কোনও প্রকারে বর্তমান থাকিলেও, একটি বিশিষ্ট উপাসক সম্প্রদায় হিসাবে গাণপত্য সম্প্রদায়ের উদ্ভব তখনও হয় নাই। ব্রহ্মাকে কেন্দ্র করিয়া একটি পৃথক উপাসকমণ্ডলীর প্রবর্তন করিবার প্রচেষ্টার কথা পূর্বে বলা হইয়াছে। বৃহৎসংহিতার উল্লিখিত উদ্ধৃতি হইতে এ অনুমান কিয়ৎ পরিমাণে সমর্থিত হয়। তবে সে প্রচেষ্টা বিশেষ ফলবতী হয় নাই। ইহাও লক্ষ্য করিবার যোগ্য যে বৃহৎসংহিতাকার ব্রাহ্মণ্য ধর্মসম্প্রদায়গুলির সমপর্যায়ে বৌদ্ধ ও জৈন সম্প্রদায় দুটিকেও ফেলিয়াছেন। ইহাতে কোনও অসামঞ্জস্য হয় নাই, কারণ এই দুটি সম্প্রদায়ভুক্ত উপাসকগণের ধর্মাচরণের মূলসূত্র ছিল ভক্তিবাদ, এবং মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত নিজ নিজ ইষ্টদেবতার মূর্তিপূজন ছিল তাহাদের অন্তর্নিহিত ভক্তির বাহ্য প্রকাশ।’– (জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়/ পঞ্চোপাসনা, পৃষ্ঠা-১৪-৫)
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা ভালো– বৈদিক গ্রন্থে কোথাও প্রতিমাপূজার কথা নেই। প্রতিমাপূজা বস্তুত পুরাণের বিশেষত্ব। বর্তমানে প্রচলিত পূজা পুরাণ ও তন্ত্রের দান। তা হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে– ‘কোন সময় থেকে ভারতবর্ষে প্রতিমা পূজা প্রচলিত হয়। একথা নিশ্চিতভাবে বলা খুবই শক্ত হলেও খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর আগেই প্রতিমা পূজা ও মন্দির সুপ্রচলিত হয়েছে, একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কারণ পতঞ্জলি খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে শিব, স্কন্দ ইত্যাদি দেবতার প্রতিমা বিক্রির কথা লিখেছেন। চিতোরের নাগরী শিলালিপিতে (খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০-২৫০) বাসুদেব ও সংকর্ষণের মন্দিরের কথা উল্লেখ আছে। সম্ভবত এই হল বৈষ্ণব মতের অস্তিত্বের সর্বপ্রাচীন শিলালিপি। এই শিলালিপি সংস্কৃত ভাষায় লিখিত বলে সংস্কৃত শিলালিপির প্রাচীনতম নিদর্শন বলে স্বীকৃত।’– (অশোক রায়, বিবর্তনের ধারায় শিব ও শিবলিঙ্গ)
এ প্রেক্ষিতে শৈবদের প্রধান পূজাপ্রতীক শিবলিঙ্গের প্রচলন সম্পর্কে জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন– ‘শৈবদিগের প্রধান পূজাপ্রতীক শিবলিঙ্গের প্রকৃতি ও প্রচলন বিষয় অনুশীলনকালে আমি দেবতার অসংখ্য লীলামূর্তির উল্লেখ করিয়াছি। লিঙ্গ প্রতীক ও লীলামূর্তিগুলি শিবের পঞ্চকৃত্যের (সৃষ্টি, স্থিতি, সংহার, প্রসাদ বা অনুগ্রহ এবং তিরোভাব) মধ্যে অন্ততঃ তিনটির, যথা সৃষ্টি, সংহার ও অনুগ্রহের রূপ দান করে। লিঙ্গ প্রতীক দেবতার সৃজন-শক্তি বা প্রথম কৃত্যেরই বাহ্য রূপ। অপর দুইটি কৃত্যের ও দেবতার অন্য সব বৈশিষ্ট্যেরও শাস্ত্রসঙ্গত রূপায়ণ মধ্যযুগীয় শিল্পীরা নানাভাবে করিয়াছিলেন।… শিবের মানবোচিত মূর্তি সকল প্রধানতঃ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। বৈদিক ও বেদপরবর্তী সাহিত্যে রুদ্র-শিব দেবতার দুই রূপের (উগ্র ও সৌম্য) বর্ণনার কথা পূর্বে বলা হইয়াছে। শিবমূর্তির অধিকাংশ এই দুই পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। ইহাদিগের মধ্যে আবার এক বৃহত্তর সংখ্যা দেবতার সম্বন্ধীয় কোনও না কোনও পৌরাণিক কাহিনীর রূপ প্রদান করে। মূর্তিগুলির অল্পাংশ দুরূহ শিবতত্ত্বেরও কিঞ্চিৎ পরিচয় দেয়। শেষোক্ত প্রতিমাসমূহের এবং উগ্র ও সৌম্য বিভাগদ্বয়ের কয়েকটির ভিত্তিমূলে সাধারণতঃ কোনও পৌরাণিক কাহিনীর অস্তিত্ব নাই।’- (পঞ্চোপাসনা, পৃষ্ঠা-১৩৯)
আমাদের বর্তমান আলোচনার মুখ্য বিষয় শিব পূজার প্রচলন যে খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের বহু পূর্বেই হয়েছিল সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ করে মহাকাব্যের যুগেই অর্থাৎ মহাভারত ও রামায়ণের সময়কালে আমরা শিব ও লিঙ্গের একাত্তীকরণের পাশাপাশি তাঁর পূজা প্রচারের বিস্তৃতি দেখতে পাই। মহাভারত ও রামায়ণের বহু স্থানে শিব ও তাঁর অনুগামীদের উল্লেখ আছে এবং এই দেবতার প্রাধান্য ও সম্যক প্রতিষ্ঠার পূর্ণ পরিচয় পাওয়া যায়। নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের মতে এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই যে বৈষ্ণবদের মত শৈবরাও এই দুইটি মহাকাব্য নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা প্রয়াস পেয়েছিলেন এবং সুবিধামত মহাকাব্যদ্বয়ের এখানে ওখানে শিবের মাহাত্ম্যের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন।
এই যে দেবতা,– ‘তিনি একাধারে রুদ্র, শিব ও মহাদেব; তিনি গিরীশ, গিরিত্র, কপর্দী, কৃত্তিবাস (যাঁহার পরিধানে পশুচর্ম), হর (যিনি হরণ অথবা সংহার করেন), ভব। এই সকল নাম ঋগ্বেদ পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে তাঁহাতে অর্পিত দেখা যায়। এ যুগেও তিনি এই সব নামে অভিহিত হইয়াছেন ত বটেই, পরন্তু আরও নূতন নূতন বৈশিষ্ট্যের দ্বারা তিনি চিহ্নিত হইয়াছেন। মহাকাব্যদ্বয় ও প্রধান প্রধান পুরাণগুলিতে তাঁহার সম্বন্ধে বহু কাহিনী ও কিংবদন্তী প্রচলিত আছে, যাহাদের মধ্যে অন্ততঃ কোনও কোনওটির উৎপত্তি স্থল শেষের দিকের বৈদিক সাহিত্যে নির্ণীত হয়। গজাসুর বধ করিয়া শিব কর্তৃক গজচর্ম পরিধানের পৌরাণিক গল্প আমরা শত রুদ্রীয়তে প্রদত্ত রুদ্রের অন্যতম নাম ‘কৃত্তিবাস’ হইতে উৎপন্ন মনে করিতে পারি। শিবের দক্ষযজ্ঞ বিনাশ কাহিনীর উৎস বোধ হয় তাণ্ড্য মহাব্রাহ্মণে পাওয়া যায়। দেবতারা বলির পশু নিজেদের মধ্যে ভাগ করিতেছিলেন। তাঁহারা রুদ্রকে এড়াইয়া গিয়াছিলেন, অর্থাৎ তাঁহাকে ভাগ দেন নাই (দেবাঃ বৈ পশূন্ ব্যভজন্ত। তে রুদ্রমন্তরায়ন ; ৭, ৯, ১৬)। এই কাহিনী রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণাদিতে কোথাও স্বল্প পরিসরে কোথাও বা অতি বিস্তৃত আকারে বর্ণিত দেখা যায়। দক্ষ প্রজাপতি অনুষ্ঠিত দৈব যজ্ঞে সকল দেবতা নিমন্ত্রিত হইলেও রুদ্র-শিব নিমন্ত্রিত হন নাই, কারণ বৈদিক যজ্ঞের ভাগে তাঁহার কোনও অধিকার ছিল না। শিবের স্ত্রী দক্ষের অন্যতম কন্যা ইহাতে ক্ষুব্ধ হইয়া বিনা নিমন্ত্রণে স্বামীর নিষেধসত্ত্বেও পিতৃগৃহে আসিয়া পিতার নিকট পতিনিন্দা শ্রবণে দেহত্যাগ করিলে, শিব ক্রুদ্ধ হইয়া দক্ষযজ্ঞ বিনাশ করেন এবং বৈদিক দেবতাগণের, দক্ষের, ও যজ্ঞে উপস্থিত ব্রহ্মর্ষিগণের প্রভূত শাস্তি বিধান করেন। এই কাহিনীর সর্বাপেক্ষা সংক্ষিপ্ত বিবরণ রামায়ণের আদিকাণ্ডে পাওয়া যায় (১, ৬৬, ৭…)। মহাভারতের সৌপ্তিক ও শান্তিপর্বে ইহার অপেক্ষাকৃত বিস্তৃত বর্ণনা দেখি। শান্তিপর্বোক্ত আখ্যানে দধীচী মুনি রুদ্র-শিবের পক্ষ লইয়া দক্ষ ও যজ্ঞে সমবেত বৈদিক দেবতা ও ঋষিগণের সহিত বিতণ্ডাকালে রুদ্র মহেশ্বরকে পশুভূৎ, স্রষ্টা, জগৎপতি, সকলের প্রভু এবং প্রকৃত যজ্ঞভোক্তা বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। ইহার উত্তরে দক্ষ প্রজাপতির একটি উক্তি লক্ষ্য করিবার বিষয়। দক্ষ বলিতেছেন যে শূলধারী জটামুকুটবিশিষ্ট একাদশ রুদ্র আছেন বটে, কিন্তু মহেশ্বরকে আমি জানি না (সন্তি নো বহবো রুদ্রাঃ শূলহস্তাঃ কপর্দিনঃ। একাদশ স্থানগতাঃ নাহং বেদ্মি মহেশ্বরম্)। এখানে যেন বৈদিক রুদ্র হইতে পৌরাণিক রুদ্র-শিবকে পৃথক্ করা হইয়াছে।’– (জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়/ পঞ্চোপাসনা, পৃষ্ঠা-১৩২-৩৪)
মহাশয় অক্ষয় কুমার দত্তের মতে,– ‘রামায়ণ ও মহাভারত কেবল বৈদিক ধর্ম্মের বৃত্তান্ত নয়। এই উভয়ই বৃক্ষরুহা-সমাকীর্ণ বিশাল বৃক্ষের ভূমিস্বরূপ। বৈদিক ধর্ম্ম রূপ প্রাচীনতর তরুস্কন্ধে পৌরাণিক ধর্ম্মরূপ প্রবল বৃক্ষরুহা বদ্ধমূল হইয়া ঐ মহাবৃক্ষকে নিস্তেজ করিয়া ফেলিতেছে, এইরূপই দৃষ্ট হইয়া থাকে। ঐ অভিনব ধর্ম্মের মতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও তদীয় শক্তি সমুদায়ই প্রধান দেবতা ও মনুষ্যের প্রধান উপাস্য। ঐ তিনটি দেবতার সমবেত নাম ত্রিমূর্ত্তি। পৌরাণিক ও তান্ত্রিক মতানুযায়ী ব্যাখ্যানুসারে, এ ত্রিমূর্ত্তি ওঙ্কারের প্রতিপাদ্য।… মহাভারতের ব্রহ্মার মহিমা অপেক্ষাকৃত খর্ব্ব দেখা যায়; শিব ও বিষ্ণু-উপাসনারই প্রাদুর্ভাব দৃষ্ট হয়। স্থানে স্থানে ব্রহ্মার পূর্ব্ব মহিমার কিছু কিছু নিদর্শনও লক্ষিত হইয়া থাকে। এই অনতি প্রাচীন মতে বৈদিক দেবগণ একবারে অগ্রাহ্য নয়, কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট পদে অবস্থাপিত হইয়াছেন। ইন্দ্র দেবরাজ বলিয়া লিখিত বটে, কিন্তু ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব তদপেক্ষা অতিমাত্র উচ্চতর পদে প্রতিষ্ঠিত।’- (ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায় দ্বিতীয় ভাগ, উপক্রমণিকা, পৃষ্ঠা-১৮০)
রামায়ণে শিব শিতিকণ্ঠ, মহাদেব, রুদ্র, ত্র্যম্বক, পশুপতি ও শঙ্কর নামে আখ্যাত হয়েছেন। উমার সঙ্গে শিবের বিবাহের তপস্যার কাহিনী, শিবের অভিশাপে কন্দর্পের দেহহীন হবার কাহিনী, কার্ত্তিকেয়ের জন্মের কাহিনী, গঙ্গা আনয়নের জন্য শিবের উদ্দেশে ভগীরথের তপস্যার কাহিনী, সমুদ্র মন্থনে শিব কর্তৃক গরল পানের কাহিনী প্রভৃতি রামায়ণে স্থান পেয়েছে (রামায়ণ-১/২৩, ১/৩৫, ১/৩৮, ১/৪৫)। মহাভারতেও ওই সকল কাহিনী বর্তমান। অনুশাসনপর্বে কৃষ্ণ কর্তৃক শিবের উপাসনার কাহিনী আছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মহাভারতে বেদ, সাংখ্য, যোগ এবং পাঞ্চরাত্রের পাশাপাশি পাশুপত-শৈব ধর্মের স্বতন্ত্র স্বীকৃতি। দক্ষযজ্ঞ ভঙ্গের পর শিব দক্ষকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা হচ্ছে পাশুপত ধর্ম।
মহাভারতের রচনাকাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক বলে রাহুল সাংকৃত্যায়ন প্রমুখ পণ্ডিতদের অভিমত। আর রামায়ণ মহাভারতের পূর্ববর্তী বলে মহাশয় অক্ষয় কুমার দত্তের পর্যবেক্ষণসুলভ অভিমত। আমরা যদি উভয়টিকে সমকালবর্তী বলেও ধরে নেই, নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের বক্তব্য অনুযায়ী– ‘অনুমান করা যেতে পারে পূর্বতন যুগের রুদ্র, শিব ও সমজাতীয় দেবতাদের বিচ্ছিন্ন উপাসনা খ্রিস্টীয় প্রথম থেকে চতুর্থ শতকের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট রূপ পরিগ্রহ করেছিল এবং বিচ্ছিন্ন পূজাপদ্ধতি, আচার অনুষ্ঠান ও ধ্যানধারণাসমূহ সংহতি লাভ করেছিল। এটা শৈব ধর্মের দ্বিতীয় পর্যায় বা পাশুপত ধর্ম নামে খ্যাত।’– (ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস, পৃষ্ঠা-২০১)
এখানে বলা বাহুল্য হবে না, প্রাচ্যদেশে ব্রাহ্মণ্যধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে, গুপ্ত রাজাদের আমলে। কিন্তু এই ধর্ম আর্য ঐতিহ্যমণ্ডিত ব্রাহ্মণ্য ধর্ম নয়। এই সময় যারা দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছিল, তারা নিমজ্জিত হয়েছিল আর্যেতর সমাজ প্রতিষ্ঠিত পুরাণাশ্রিত ধর্মের স্রোতে। এই ধর্ম বৈদিক ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এক ধারা। যেখানে বৈদিক দেবতামণ্ডলী চলে যায় পিছনের সারিতে, আর তাঁদের বদলে সৃষ্টি হয় নতুন এক দেব-মণ্ডলীর; যার শীর্ষে অবস্থান করছেন– ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর। আবার তাঁদেরও শীর্ষে এক নারী দেবতার অবস্থান– শিবজায়া দুর্গা। শিব অনার্য দেবতা, ব্রহ্মাও অবৈদিক দেবতা; আর বিষ্ণু বৈদিক যুগের অগুরুত্বপূর্ণ বৈদিক দেবতা হলেও, তাঁর রূপান্তর ঘটেছিল আর্যেতর সমাজের দ্বারা। ফলে ভগবান শ্রী বিষ্ণুর সহধর্মিণী হলেন এক অনার্য দেবতা শিবকন্যা– লক্ষ্মী।
‘বেশিরভাগ পুরাণই রচিত হয়েছিল এই সময়েই। মহাভারত রচনা, বেদ সংকলনও এই সময়েই হয়েছিল। আর্য-অনার্য সংস্কৃতির সংশ্লেষণ ও সমন্বয়ে সূচিত হয় এক নতুন সংস্কৃতির ধারা, যা আজও সমগ্র ভারতে হিন্দু সভ্যতা, হিন্দু ধর্ম বা হিন্দু সংস্কৃতি বলে পরিচিত। অবতারবাদের সূচনাও এই সময়েই হয়েছিল, যার পূর্ণ প্রকাশ ঘটে (সপ্তম শতাব্দীতে) শ্রীশ্রী আদি শংকরাচার্যের স্তোত্রে। পরবর্তীকালে বাংলায় এই স্তোত্রকে জনপ্রিয় করেছিলেন– কবি জয়দেব।’
‘আর্যরা এদেশে আসার আগে এই দেশ জনমানবহীন ছিল না। সুপ্রাচীন কাল থেকে যেসব প্রাচীন জাতিগুলো এদেশের মাটিতে (প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে) তাদের আপন আপন সভ্যতা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি নিয়ে বসবাস করে আসছিল, তারাই এ দেশের ভূমিপুত্র। এরা বিভিন্ন কৌম, গোষ্ঠী, (Ethnic Group) বা বৈচিত্র্যময় শাখা ও ঝাড় (Clan)-এ বিভক্ত। যার সাথে তাদের হৃদয়তাড়িত সামাজিক মানসিক ও ধর্মীয় পরম্পরা, চিরায়ত মূল্যবোধ, পবিত্র বংশধারার প্রতীক বা টোটেম জড়িত। যা তাদের দিয়েছে ধারাবাহিক সুরক্ষা ও বাঁচার রসদ। বিভিন্ন জীবজন্তু, পশুপাখি ইত্যাদি যেমন, হরিণ, বাঘ, মোষ, পাখি, মাছ, নাগ বংশধারার প্রতীক হিসেবে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। একে জীবন দিয়ে রক্ষা করাটাই পবিত্র কর্তব্য-কর্ম বলে মনে করে।’– (অশোক রায়, বিবর্তনের ধারায় শিব ও শিবলিঙ্গ, পৃষ্ঠা-৮২)
এবং আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন-এর মতে– ‘এইভাবে নানা উপাস্যের দ্বারা নানাবিধ মানবমণ্ডলী পরিচিত হইয়া উঠিয়াছে অথবা সেইসব মানবমণ্ডলীর নামে তাহাদের দেবতারা প্রখ্যাত হইয়াছেন। পরবর্তীকালে আর্য-অনার্যের সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের ফলে, যে যে মানবমণ্ডলীর মধ্যে যে দেবতা পূজিত হইলেন, হয়তো সেই দেবতার বাহন ওই মানবগোষ্ঠীর আদি লাঞ্ছন চিহ্ন বা টোটেম। তাই শিবের উপাসক প্রোষ্ঠ অর্থাৎ বৃষ বা ষণ্ড। আবার নাগেরাও ছিল শিবের উপাসক। বিষ্ণুর উপাসক গরুড়।’– (জাতিভেদ)
এভাবেই হয়তো শ্রীবিষ্ণুর অবতারমণ্ডলীতে মৎস্য, কূর্ম, বরাহ ও নৃসিংহ ভারতের আদিবাসী সমাজের টোটেম-ভিত্তিক দেবতারা স্থান পেলেন। এবং আরও লক্ষ্য করার বিষয় যে, সেই যুগে যে ধর্মীয় মহাসমন্বয় হয়েছিল তাতে বেদ-বিদ্বেষের প্রবক্তা ‘বুদ্ধ’ শ্রীবিষ্ণুর অবতার ‘বুদ্ধদেব’ রূপে পূজিত হলেন।
…
(চলবে…)
…
[পূর্বের পোস্ট : বৈদিক সাহিত্যে শিব ও তাঁর বিকাশ] [×] [পরের পোস্ট : উত্তর-বৈদিক পুরাণ সাহিত্য]
…
মন্তব্য করুন